যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বহুল আলোচিত একটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে কারেন রিড নামের এক নারীকে তার প্রেমিক জন ও’কিফের মৃত্যুর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে জন ও’কিফের মৃত্যুর ঘটনায় রিডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালত এই রায় দেন।
প্রথম বিচার প্রক্রিয়াটি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি, ফলে পুনরায় বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
গত বুধবার ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ডেডহামের নরফোক সুপিরিয়র কোর্টের বাইরে জড়ো হওয়া শত শত সমর্থকের উদ্দেশ্যে কারেন রিড তার আইনজীবী দল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়বার বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগে কারেন রিড বিভিন্ন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে কথা বলেছিলেন।
প্রসিকিউটর সেই সাক্ষাৎকারগুলি আদালতে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রিডকে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তবে হত্যার অভিযোগ থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এই কারণে তাকে এক বছরের জন্য প্রবেশন দেওয়া হয়েছে।
বিচার চলাকালীন সময়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউটর, বিশেষ করে, কারেন রিডের দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের ক্লিপ ব্যবহার করেন, যেখানে তিনি নিজের সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছিলেন যা তার বিপক্ষে যায়।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জন ও’কিফের শরীরে পাওয়া কিছু আঘাতের চিহ্ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ঘটনার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
আদালতে শুনানিতে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মাইকেল প্রক্টর, ব্রায়ান অ্যালবার্ট এবং ব্রায়ান হিগিন্স সহ প্রথম বিচারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী দ্বিতীয়বার সাক্ষ্য দেননি। এই বিষয়ে আইনজীবীরা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তবে তাদের বিষয়ে কিছু তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। যেমন, মাইকেল প্রক্টরের কিছু আপত্তিকর টেক্সট মেসেজ, যা মামলার শুরুতে আলোচনায় এসেছিল।
বিচার চলাকালে, কারেন রিডের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন যে, তাদের মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু প্রসিকিউশন পক্ষের শক্তিশালী প্রমাণ ছিল, যার মধ্যে ঘটনার দিন জন ও’কিফের মরদেহ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, সেখানকার ছবি এবং আলামত অন্যতম।
ও’কিফের সেলফোনের ডেটা বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, তিনি কারেন রিডের গাড়ি থেকে নামার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার ফোনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
আদালতের রায়ের পর কারেন রিডের সমর্থকরা আনন্দ প্রকাশ করেন। তারা বিশ্বাস করেন, রিডকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ ছিল।
তারা মনে করেন, এই মামলার মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে দুর্নীতি প্রকাশ হয়েছে।
এই মামলার রায় ঘোষণার আগে, জুরিদের মধ্যে একবার বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তারা প্রথমে একটি রায় দেওয়ার কথা জানালেও পরে তা পরিবর্তন করেন।
তবে বিচারক চূড়ান্ত রায় গ্রহণ করেন, যা ছিল সর্বসম্মত। এখন প্রশ্ন উঠেছে, জন ও’কিফের মৃত্যুরহস্যের সমাধান কি আদৌ হবে?
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করা হবে কিনা, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন