কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আবাসিক ভবনে হতাহত, রাশিয়ার উপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জেলেনস্কির।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়ার উপর চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তিনি এই হামলার তীব্র নিন্দা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর উপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে কিয়েভের একটি নয় তলা অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে আঘাত হানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। এতে এখন পর্যন্ত ২৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৪২ জনের বেশি। কিয়েভ সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তাকাশেঙ্কো বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই বছর কিয়েভে চালানো সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা এটি।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি, তার চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকোর সাথে কিয়েভের সোলোমিয়ানস্কি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি পরিদর্শন করেন। সেখানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল অর্পণ করেন তারা। ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাতে ভবনটি ধসে পড়েছিল, যেখানে ২৩ জন নিহত হন।
জেলেনস্কি টেলিগ্রামে লেখেন, “এই হামলা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় যে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে হত্যাযজ্ঞ বেছে নিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো রাশিয়াকে যুদ্ধের ‘আসল মূল্য’ বোঝাতে প্রস্তুত রয়েছে।
মঙ্গলবার কিয়েভে চালানো এই হামলাটি ছিল ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার একটি অংশ। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মতে, এটি ছিল যুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম বোমা হামলা, যা বর্তমানে চতুর্থ বছরে পড়েছে।
এদিকে, প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্ট লাইনের কিছু অংশে রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রচেষ্টা তেমন কোনো অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেনের সেনা সমাবেশ বন্ধ এবং পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং মার্কিন বাণিজ্য শুল্কের কারণে বিশ্বের মনোযোগ ইউক্রেন থেকে কিছুটা সরে গেছে। এর ফলে মস্কোর উপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর জন্য কিয়েভের আবেদনগুলো সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া আবাসিক এলাকাগুলোতে দীর্ঘ-পাল্লার হামলা জোরদার করেছে। তবে বুধবার পুতিন তার দেশের সামরিক বাহিনী আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, হামলাগুলো ‘সামরিক শিল্প’ লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে।
সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে আলাপকালে পুতিন জানান, তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে তিনি আবারও উল্লেখ করেন যে ইউক্রেনীয় নেতার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে তিনি বৈধতা হারিয়েছেন। যদিও কিয়েভ এবং তার মিত্র দেশগুলো এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
পুতিন বলেন, “আমরা একটি নিষ্পত্তির নীতিমালার ভিত্তিতে অর্থপূর্ণ আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইস্তাম্বুলে আগের দফা আলোচনার মাধ্যমে বন্দী ও নিহত সৈন্যদের মরদেহ বিনিময় করা হয়েছিল।
বুধবার পুতিন ইউক্রেনে শান্তির জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তবে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সাইবিহা বৃহস্পতিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, তার দেশ “শর্তহীনভাবে” যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধের আগ্রহের কথা “মিথ্যাচার”।
সাইবিহা লেখেন, “ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করার ১০০ দিন পার হয়েছে, যা হত্যাকাণ্ডের অবসান ঘটাবে এবং একটি প্রকৃত শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাবে… এই ১০০ দিনে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস আরও বাড়িয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইউক্রেন শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিচল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রাশিয়া হত্যার অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা উপেক্ষা করে যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে।”
বুধবার রাতে রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে ১০৪টি শাহেদ ড্রোন এবং কিছু ভুয়া ড্রোন নিক্ষেপ করে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, এর মধ্যে ৮৮টিকে ভূপাতিত করা হয়েছে অথবা তারা রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এই হামলায় হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।