যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত: ইউক্রেন এখন ইউরোপীয় ড্রোন প্রস্তুতকারকদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ড্রোন বা মনুষ্যবিহীন উড়োজাহাজ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কৃষি, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা—ড্রোন এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এর সম্ভাবনা অনেক। মাঠ পরিদর্শনে, শস্য পর্যবেক্ষণে, এমনকি জরুরি ত্রাণ বিতরণেও ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার অন্য মাত্রা যোগ করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ইউরোপের ড্রোন প্রস্তুতকারকদের জন্য ইউক্রেন এখন এক পরীক্ষাগার।
সেখানে তাঁদের তৈরি ড্রোনগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করা হচ্ছে, সেই সঙ্গে যুদ্ধের কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার বিষয়টিও পরখ করা হচ্ছে।
ফরাসি ড্রোন প্রস্তুতকারক হেনরি সেইডক্সের মতে, ইউক্রেন ড্রোন প্রযুক্তির দিক থেকে “আশ্চর্যজনক”। যুদ্ধের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, প্রতিনিয়ত নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে।
তিনি নিয়মিতভাবে ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রস্তুতকারক, সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করছেন। তাঁর মতে, প্রতি কোয়ার্টারে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে।
এই যুদ্ধে ড্রোনগুলো শুধু পর্যবেক্ষণ বা তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না, বরং সরাসরি আক্রমণেও ব্যবহার করা হচ্ছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন—উভয় পক্ষই এখন ড্রোনের ওপর নির্ভরশীল।
ফলে, এটি একটি প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে, যা প্রস্তুতকারকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
ফ্রান্সের ‘ডেলর’ (Delair) কোম্পানি ইউক্রেনকে ১০০টি বিস্ফোরক ড্রোন সরবরাহ করেছে। এই ড্রোনগুলো সৈন্যদের লক্ষ্য করে আঘাত হানতে সক্ষম।
ডেলরের প্রেসিডেন্ট বাস্তিয়েন মানচিনি জানিয়েছেন, তাঁদের তৈরি অন্যান্য অসামরিক ড্রোনগুলোও ইউক্রেনে ভালো কাজ করছে। ফলে বেসামরিক ব্যবহারকারীরাও এই প্রযুক্তির ওপর আস্থা রাখছেন।
তাঁর মতে, “এটি আমাদের বাজার জিততে সাহায্য করেছে। মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
প্যারিস এয়ার শো-তে (Paris Air Show) নিজেদের তৈরি নতুন ড্রোন ‘এনাফি ইউকেআর’ (Anafi UKR) প্রদর্শন করে ‘প্যারট’ (Parrot)। এই ড্রোনটি তৈরি করা হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশের কথা মাথায় রেখে।
এটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা রেডিও সংকেত বা নেভিগেশন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পথ খুঁজে নিতে সাহায্য করে। প্যারট বলছে, এই ড্রোন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সীমান্ত নজরদারি এবং উদ্ধারকাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে, ড্রোন প্রস্তুতকারকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। একদিকে যেমন তাঁরা তাঁদের প্রযুক্তির পরীক্ষা করছেন, তেমনই ব্যবসার নতুন দিগন্তও উন্মোচন করছেন।
যুদ্ধের এই অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য ভবিষ্যতে আরও উন্নত ড্রোন তৈরি করতে সহায়ক হবে, যা বেসামরিক খাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস