যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি: শ্রমিক সংকট এবং ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক নীতির পরিবর্তন শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশটির অর্থনীতিতে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে কৃষি, খাদ্য পরিষেবা এবং নির্মাণ শিল্পে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট।
অভিবাসন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগের আকস্মিক ধরপাকড়ের কারণে অনেক শ্রমিক কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার, ধরপাকড়ের গুজবও একই রকম উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ায়, এই সংকট আরও বাড়ে। ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা তাঁর রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।
সম্প্রতি আইসিই প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ জনকে আটকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন ব্যবসার মালিকরা তাঁদের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
খামার, রেস্তোরাঁ এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ায় তাঁরা কর্মী সংকটে ভুগছেন। অনেক ক্ষেত্রে, শ্রমিকরা আইসিইর ভয়ে কাজে যোগ দিতে রাজি হচ্ছেন না।
এর ফলে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং ব্যবসার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউ মেক্সিকোর একটি দুগ্ধ খামারে কর্মী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
ওয়াশিংটন রাজ্যে চেরি ফল তোলার মৌসুমেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেখানে শ্রমিকরা আইসিইর ধরপাকড়ের গুজবের কারণে কাজ করতে আসছেন না।
এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, অভিবাসী শ্রমিকরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ ছিলেন বিদেশি বংশোদ্ভূত। খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশন বিষয়ক কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের প্রায় ২৪ শতাংশ এবং কৃষি, মৎস্য ও বনজঙ্গলে কর্মরত শ্রমিকদের ৩৮ শতাংশ বিদেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসন নীতির কারণে ব্যবসার সময়সীমা বাড়ছে, খরচ বাড়ছে এবং পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
যদিও কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, অভিবাসীদের আগমন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিবাসন নীতি এবং অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস