জীবনে হতাশা একটি কঠিন বিষয়, বিশেষ করে যখন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠাটাই যেন বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিনের এই কঠিন লড়াইয়ে অনেকেই হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু তাদের জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি, তাই এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা সম্পর্কে অবগত করা খুবই জরুরি।
ঘুম থেকে ওঠার প্রথম ধাপটি হতে পারে একটি সুন্দর সকালের রুটিন তৈরি করা। অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠেই অফিসের জন্য ছুটতে হয়, যেখানে সকালের নাস্তার জন্য সময় বের করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু যদি এমন একটি সকালের রুটিন তৈরি করা যায় যা আপনাকে খুশি করবে, তবে দিনের শুরুটা হয়তো অন্যরকম হতে পারে।
শুরুটা খুব সাধারণ হতে পারে: প্রথমে বিছানায় বসুন। বালিশগুলো গুছিয়ে নিন এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে আরাম করে বসুন।
অনেক সময়, শুধু বসে থাকাই আপনাকে প্রস্তুত করবে। এরপর হয়তো আপনি উঠতে, তৈরি হতে এবং দিনের কাজ শুরু করতে পারবেন।
ডিম, বেকন অথবা এক কাপ কফির কথা ভাবলে আপনার ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করতে পারে। এমনকী, ক্ষুধা লাগলে হয়তো আপনি বিছানা থেকে উঠে কিছু খেতেও চাইবেন।
তবে, যদি হতাশায় আপনার খাওয়ার রুচি কমে যায়, তাহলে কিছু খাওয়া, এমনকি এক টুকরো রুটি খেলেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।
সকালের অ্যালার্ম বন্ধ করার জন্য বিছানা থেকে উঠতেই হবে। এক্ষেত্রে, একটির বদলে কয়েকটি অ্যালার্ম সেট করুন এবং ফোন বা ঘড়ি হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।
প্রথম অ্যালার্ম বাজার পরেও যদি ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা থাকে, তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় অ্যালার্ম বাজার পরে আপনি হয়তো বলবেন, “ঠিক আছে, উঠছি!”
পুরোনো দিনের মতো খাতা-কলম ব্যবহার করাটা এখন হয়তো তেমন প্রচলিত নয়, তবে এর উপকারিতা অনেক।
প্রতিদিন সকালে এমন কিছু লিখুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। যেমন, আপনার পোষা প্রাণী অথবা পরিবারের সদস্য। রাতে ঘুমানোর আগে লিখলে সকালে ঘুম থেকে উঠে তা পড়ার মাধ্যমে দিনের শুরুটা আরও ভালো হতে পারে।
সকালে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে সবকিছু করুন। নিজেকে সময় দিন।
ফোন ব্যবহারের মাধ্যমেও সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগ্রহ তৈরি করা যেতে পারে। ই-মেইল চেক করা অথবা পছন্দের কোনো পশুর ভিডিও দেখার মাধ্যমে দিনের শুরুটা করতে পারেন।
তবে, ফোনে বেশি সময় কাটানো কমাতে একটি টাইমার সেট করতে পারেন, যা ১৫ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয়।
আলো-চিকিৎসা বা লাইট থেরাপিও হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। উজ্জ্বল আলো প্রদানের মাধ্যমে এটি আপনার মনকে সতেজ করতে সাহায্য করে।
যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবে এটি সিজনাল ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (SAD) এবং ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে।
আলো-চিকিৎসা শুরু করার জন্য বিছানা থেকে সঙ্গে সঙ্গে ওঠার প্রয়োজন নেই। চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হলেও, কিছুক্ষণ আলোর সামনে বসলে ভালো লাগবে।
যদি আপনার হতাশা গুরুতর হয় এবং বিছানা থেকে উঠতে সমস্যা হয়, তবে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না। সাহায্য চাওয়া কঠিন হতে পারে, তবে মনে রাখবেন, আপনি একা নন এবং যারা আপনাকে ভালোবাসে তারা অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করতে চাইবে।
চিকিৎসার পরিকল্পনা পরিবর্তন করাও এক্ষেত্রে জরুরি। একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ওষুধ এবং থেরাপির মাধ্যমে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।
যদি আপনার ওষুধ আপনাকে ঘুম এনে দেয় বা ঘুম কমিয়ে দেয়, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ডোজ বা সময় পরিবর্তন করার বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।
কখনও কখনও একটি মানসিক স্বাস্থ্য দিবস নেওয়াও জরুরি। যদি আপনি মনে করেন, আপনি পারছেন না, তাহলে নিজেকে সময় দিন। মানসিক স্বাস্থ্যকে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্ব দিন।
জ্বর বা ফ্লু হলে যেমন বিশ্রাম নেওয়া হয়, তেমনি মানসিক অবসাদে ভুগলে একটি দিনের ছুটি নিন। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।
মনে রাখতে হবে, সবার শরীর এবং পরিস্থিতি এক রকম নয়। তাই নিজের প্রতি সদয় হন এবং নিজের যত্ন নিন।
এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।