ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পাল্টা আঘাত, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে, যার মধ্যে একটি আঘাত হেনেছে দেশটির প্রধান একটি হাসপাতালেও। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও ধোঁয়ার ছবি প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার খবর পাওয়া গেছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে একাধিক ওয়ারহেড ছিল, যা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সহজে প্রতিহত করা কঠিন।
হামলার পর ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে দায়ী করে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ইরানের বুশেহরে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, সেখানে ২০০ জনের বেশি রুশ কর্মী কাজ করছেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরান এ পর্যন্ত ইসরায়েলের দিকে প্রায় ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০০ ড্রোন ছুঁড়েছে। এর মধ্যে কিছু ড্রোন ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোও ব্যবহার করেছে।
ইসরায়েল এখন ইরানের পূর্বাঞ্চলে আক্রমণ শুরু করেছে।
গাজায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে ৬৯ জনের মৃতদেহ এবং ২২১ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়েছে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
সংঘাতের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, এই সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ। ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছে। তবে, তাদের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, যদি লেবাননের হিজবুল্লাহ ইরানকে সমর্থন করে, তবে তা হবে খুবই বিপদজনক।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাত থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই অঞ্চলে সংঘাত আরও বাড়াবে।
সংঘাতের কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের ইরান ও ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং ওমান তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
গাজায় সাহায্য বিতরণের স্থানে ইসরায়েলি হামলায় আরও আটজন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের আশেপাশে ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রায়ই গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস