ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস কেট মিডলটনের সহায়তায় এক কিশোরীর স্বপ্নপূরণ, যা ক্যান্সারকে জয় করে বিশ্বে আলো ছড়িয়েছিল।
ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে এক সাধারণ পরিবারে জন্ম লিজ হাটনের। অল্প বয়সেই বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও, ফটোগ্রাফি ছিল তার স্বপ্নের জগৎ। ছবি তোলার অদম্য ইচ্ছাই ছিল তার বেঁচে থাকার মূল মন্ত্র।
যখন লিজের জীবন সংকটাপন্ন, তখন তার পাশে এসে দাঁড়ান প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস কেট। তাদের সহায়তায় লিজের স্বপ্ন পূরণ হয়, যা অনেকের কাছে আজও অনুপ্রেরণা।
২০২৪ সালের নভেম্বরে লিজের মৃত্যুর পর, তার মা ভিকি রবেয়না জানান, তাদের বাগানে প্রতি বছর একটি বিশেষ ফুল ফোটে—’আইস এন রোজস আর্লি রোজ’। এই ফুলটি ছিল প্রিন্স উইলিয়াম ও কেটের দেওয়া এক বিশেষ উপহার, যা লিজের স্মৃতিস্বরূপ আজও অম্লান।
লিজের মা ভিকি জানান, লিজের একটি ইচ্ছাপূরণের তালিকা ছিল। এর মধ্যে ছবি তোলার বিভিন্ন কাজ করা অন্যতম ছিল। প্রিন্স উইলিয়াম যে দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, সেই সূত্রে রাজপরিবারের সদস্যরা লিজের কথা জানতে পারেন।
এরপর তারা লিজকে উইন্ডসর ক্যাসেলের একটি রাজকীয় অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে কেট মিডলটন, যিনি নিজেও ওই সময়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, লিজ এবং তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
লিজ বলত, তারা দু’জন ছিলেন সবচেয়ে আন্তরিক মানুষ। তারা ছিলেন খুবই দয়ালু এবং সাধারণ।
তিনি আরও যোগ করেন, “কেট এবং উইলিয়াম, দুজনেই লিজের ছোট ভাই মাতেওর সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশেছিলেন। লিজ তাদের ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়েছিল।
পরিবারটি জানায়, রাজ পরিবারের এই সমর্থন তাদের কাছে ছিল বিশাল এক ভালোবাসার আশ্রয়। লিজের চিকিৎসার জন্য ‘ডেস্মো প্লাস্টিক স্মল রাউন্ড সেল টিউমার’ নামক বিরল রোগের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে, তার পরিবার ‘ক্যাপচার’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা তৈরি করে। এই সংস্থা এরই মধ্যে ১৬৩,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে, যা বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার বেশি।
প্রিন্সেস কেটের সমর্থন এখনো অব্যাহত। ভিকি ও তার পরিবারকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে কেটের ক্রিসমাস ক্যারল অনুষ্ঠানে এবং পরের বছর মে মাসে বাকিংহাম প্যালেসে একটি গার্ডেন পার্টিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে তারা রাজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
লিজের ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা ছিল অবিচল। তার ইচ্ছাশক্তি ছিল প্রবল। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগেও তিনি ছবি তুলেছেন।
তার মা জানান, “ক্যান্সার সম্পর্কে সবার জানা উচিত, তবে একইসঙ্গে প্রিন্সেসের (কেট) মতো ভালো মানুষটির কথা মানুষকে জানানোও জরুরি।”
লিজ চাইতেন, মানুষ জানুক, ক্যান্সারের কারণে তিনি হতাশ ছিলেন না। বরং প্রতিটি সুযোগকে তিনি উপভোগ করেছেন। মৃত্যুর পর, উইলিয়াম ও কেট তাদের সামাজিক মাধ্যমে একটি ব্যক্তিগত বার্তা পাঠান। যেখানে তারা লিজের বাবা-মা এবং ভাইয়ের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন।
লিজের পরিবার জানায়, এই কঠিন সময়ে কেট ও উইলিয়ামের সমর্থন তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। লিজের মৃত্যুর পর, তার ভাই মাতেওর স্মৃতিতে লিজের ছবি তোলার মুহূর্তগুলো এখনো উজ্জ্বল।
আমি যদি পারতাম, তবে যেকোনো মূল্যে লিজকে বাঁচিয়ে রাখতাম। কিন্তু যদি তাকে চলে যেতেই হতো, তবে আমি বলব, তার মৃত্যুটা ছিল ভালোবাসাপূর্ণ, যত্নের এবং পৃথিবীর কাছে মূল্যবান।”
তথ্য সূত্র: পিপল