নতুন একটি করোনাভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এনবি.১.৮.১ নামক এই নতুন ধরনটি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্ভবত ওমিক্রন স্ট্রেইন থেকে এসেছে। ইতিমধ্যেই চীনসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধিতে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করা হচ্ছে।
ইউরোপেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এই এনবি.১.৮.১ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
গত এক মাসে এই সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ভাইরাসটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসাটা স্বাভাবিক।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট এলে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—এটি কি আগের চেয়ে বেশি মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করছে? এটি কি দ্রুত ছড়াচ্ছে? এবং বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো কি এর বিরুদ্ধে কাজ করছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, এনবি.১.৮.১-কে তারা ‘পর্যবেক্ষণে থাকা ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় এটির তীব্রতা বেশি নয়।
তবে এটি দ্রুত ছড়াতে পারে।
এই ভ্যারিয়েন্টটির বিরুদ্ধে বর্তমান ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হু’র মতে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি হয়তো ভ্যাকসিনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা এড়িয়ে যেতে পারে।
তবে যেহেতু এটি ওমিক্রনের একটি ঘনিষ্ঠ সংস্করণ, তাই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা একেবারে কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা কম।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের হার কমাতে হলে আমাদের আগের মতোই সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষ করে, জনবহুল স্থানগুলোতে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
বয়স্ক এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
বাংলাদেশে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি বা এর প্রভাব সম্পর্কে এখনো সরকারিভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গগুলো আগেরগুলোর মতোই।
কারো কারো ক্ষেত্রে হালকা জ্বর, সর্দি-কাশি হতে পারে, আবার কারো কারো শ্বাসকষ্টসহ গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
তাই, যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
তাই, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেহেতু বাংলাদেশে এখনো এই ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই পরিস্থিতিতে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নেওয়া যেতে পারে।
বিশেষ করে, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, যাদের এখনো ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি, তারা দ্রুততম সময়ে তা গ্রহণ করতে পারেন।
সবারই মনে রাখতে হবে, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং আমাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন