ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছিল।
কিন্তু তাঁর এই দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান, সাবেক পরিচালক (ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স) টুলসি গ্যাবার্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না। এমনকি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ২০০৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ধারণা করছে, একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে ইরানের এখনো অন্তত তিন বছর সময় লাগবে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প প্রশাসন কি ইচ্ছাকৃতভাবে গোয়েন্দা তথ্যকে প্রভাবিত করছে? ইরাক যুদ্ধের আগে যেমনটা হয়েছিল, তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি না, তা নিয়েও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ইরাক যুদ্ধের সময়, দেশটির কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে—এমন একটি ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
রিপাবলিকান সিনেটর মার্কওয়েইন মুলিন মনে করেন, গ্যাবার্ডের কাছে পুরনো তথ্য ছিল এবং বর্তমান প্রশাসনের কাছে ভালো তথ্য রয়েছে।
তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার মনে করেন, গ্যাবার্ডের দেওয়া তথ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অন্যদিকে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিয়ার দেওয়া তথ্যের সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (International Atomic Energy Agency) অনুমান করেছে, ইরান সম্ভবত দ্রুততম সময়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট উপকরণ তৈরি করতে পারবে—যা ১০টি পারমাণবিক বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট।
তবে উপকরণ তৈরি করা এবং তা দিয়ে অস্ত্র তৈরি করা—দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সময়ে দেওয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে তিনি এমন অনেক কথা বলেছেন, যা হয় মিথ্যা অথবা বিভ্রান্তিকর ছিল।
একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশটির মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে ‘সত্ এবং বিশ্বাসযোগ্য’ মনে করেন।
অতীতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
উদাহরণস্বরূপ, তারা ভেনেজুয়েলার সরকারের বিরুদ্ধে অভিবাসন ইস্যুতে একটি ‘আক্রমণ’-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল, যদিও গোয়েন্দা তথ্য তেমনটা নির্দেশ করেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন বিতর্কিত অতীত এবং তথ্যের অসামঞ্জস্যতা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের দেওয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
যদি ভবিষ্যতে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের এই দুর্বলতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বেশি উদ্বেগের কারণ হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন