সিনেমা প্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ উপলক্ষ্য, কেননা মুক্তি পাওয়ার অর্ধশতক পার করতে চলেছে স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর কালজয়ী সিনেমা ‘জস’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি শুধু একটি চলচ্চিত্রই ছিল না, বরং এটি ছিল সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।
‘জস’ দর্শকদের মধ্যে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, এটি আজও আলোচনার বিষয়। এই সিনেমার কিছু অজানা তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো, যা সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহ যোগাবে।
‘জস’-এর সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল এর অসাধারণ গল্প। লেখক পিটার বেঞ্চলির উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটির গল্পে ছিল অ্যামিটি নামের একটি ছোট শহরের সমুদ্র সৈকতে একটি বিশাল হাঙরের আক্রমণ এবং তার থেকে মুক্তি পাওয়ার এক রোমাঞ্চকর কাহিনি।
সিনেমার শুরুতে পরিচালক এই হাঙরটিকে সরাসরি দেখাননি, বরং দর্শকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে এর উপস্থিতি রেখেছেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
সিনেমাটির প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পুলিশের প্রধান ব্রডি। শুরুতে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চার্লটন হস্টনের মতো অভিনেতাকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও, পরে রয় শেইডারকে নির্বাচন করা হয়।
সিনেমায় হাঙরটিকে ‘ব্রুস’ নামে ডাকা হতো, যা আসলে পরিচালক স্পিলবার্গের আইনজীবী ব্রুস রামেরের নামানুসারে রাখা হয়েছিল।
এই সিনেমার শুটিং হয়েছিল মার্থাস ভিনইয়ার্ডে, তবে গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল ন্যানটকেট দ্বীপকে কেন্দ্র করে।
শুরুতে সিনেমাটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন ডিক রিচার্ডস, কিন্তু পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়। সিনেমার বাজেট ছিল ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পোস্ট-প্রোডাকশন সহ প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
সেই সময়ে, এই পরিমাণ অর্থ সিনেমায় বিনিয়োগ করা ছিল বিশাল ব্যাপার।
‘জস’-এর শুটিং ছিল বেশ কঠিন। আটলান্টিক মহাসাগরের নোনা জলের কারণে সিনেমার জন্য তৈরি করা মেকানিক্যাল হাঙরটি প্রায়ই বিকল হয়ে যেত।
এই কারণে অনেক সময় শুটিং বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই সমস্যার কারণে পরিচালক হাঙরটিকে পুরো ছবিতে দেরিতে দেখিয়েছেন, যা সিনেমার সাসপেন্স আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সিনেমাটি মুক্তির পর ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে এবং বক্স অফিসেও বিশাল সাফল্য পায়। ‘জস’ মুক্তির আগে সাধারণত বড়দিনের সময় সিনেমা মুক্তি পেত, কিন্তু এই সিনেমার সাফল্যের পর গ্রীষ্মকালে ব্লকবাস্টার সিনেমা নির্মাণের ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সিনেমাটি মুক্তির সময় ‘PG’ রেটিং পেয়েছিল, যা ছোটদের জন্য কিছুটা ভীতিজনক ছিল।
‘জস’ মোট চারটি বিভাগে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল, যার মধ্যে সেরা শব্দ, সেরা সম্পাদনা এবং জন উইলিয়ামসের সেরা সঙ্গীতের জন্য তিনটি পুরস্কার জিতেছিল।
সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছিল ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুকুস নেস্ট’। ‘জস’-এর একটি বিখ্যাত সংলাপ হলো, “ইউ আর গনা নিড আ বিগার বোট” (You’re gonna need a bigger boat)।
আজও ‘জস’ সিনেমার গল্প, নির্মাণশৈলী এবং এর পেছনের নানা ঘটনা সিনেমাপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। মুক্তির এত বছর পরেও, সিনেমাটি দর্শকদের মনে গেঁথে আছে, যা এর সাফল্যের প্রমাণ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস