ইরানে ইসরাইলের বোমা হামলার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম আতঙ্ক আর অস্থিতিশীলতা। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে মানুষজন দিন কাটাচ্ছে সীমাহীন উদ্বেগে।
অন্যদিকে জীবনযাত্রার সংকট—সবকিছু মিলে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানকার মানুষজন বলছেন, তাদের দৈনন্দিন জীবন এখন যুদ্ধের ছায়ায় ঢাকা।
সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে সেখানকার নাগরিকদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। খাবার দোকানগুলো খোলা থাকলেও, অনেকের কাছে নগদ টাকা নেই।
ফলে, জিনিস কিনতে হচ্ছে ধার করে। এমনকি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় রাজধানী থেকে মানুষজন অন্য কোথাও যেতেও পারছে না।
তেহরানের একজন বাসিন্দা সিএনএনকে জানান, তার মনে হয় যেন একটি ক্ষেপণাস্ত্র তাকে অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, “আমি কারাজে গেলে সেখানে বোমা পড়ে, আর তেহরানে এলে এখানে।”
সেখানকার একজন শিক্ষক জানান, “শহরে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইন ধরে মানুষজন নগদ টাকা তোলার চেষ্টা করছেন। কর্মীদের পক্ষে এত আবেদন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”
বোমা হামলায় সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেখানকার একজন নারী বলেন, “ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র—উভয়েই ইরানের মানুষের কথা ভাবে না।
তারা আসল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে চায়, কিন্তু সাধারণ মানুষ এর শিকার হচ্ছে। দেশটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
পরিস্থিতি এতটাই কঠিন যে, অনেকে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ এই পরিস্থিতিকে একটি “স্বৈরাচারী শাসনের ফল” হিসেবে দেখছেন।
অনেকে আবার দেশের বর্তমান সরকারের প্রতি চরম অসন্তুষ্ট। তবে, সবার মাঝে একটি বিষয় স্পষ্ট—যুদ্ধ তাদের জীবনকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়া “তাদের জন্য ১০০ শতাংশ ক্ষতির কারণ হবে।”
যদিও এখনো পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং অনেক ইরানি মনে করছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইরানের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের জাতীয়তাবাদী চেতনাও জন্ম নিচ্ছে। অনেকে দেশের পতাকা হাতে রাস্তায় নামছেন।
যুদ্ধের বিভীষিকা সত্ত্বেও, অনেকে মনে করছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ত্যাগটুকু প্রয়োজন।
তবে, শান্তির সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি শেষ পর্যন্ত এই পথে হাঁটেন, তাহলে এর শেষ দেখে ছাড়বেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন