কেপিয়ার শরণার্থী শিবিরে খাদ্য সহায়তা হ্রাসের ফলে চরম দুর্ভোগ, সাহায্যের আবেদন।
নৈনিত্যের প্রান্তরে অবস্থিত কেনিয়ার কাকুমা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ শরণার্থীর জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme – WFP)-র তহবিল কমে গেছে, যার ফলস্বরূপ শরণার্থীদের খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সেখানকার মানুষগুলোর জীবনধারণ করাই দায় হয়ে পড়েছে।
কাকুমা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী প্রায় তিন লক্ষ মানুষের খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে প্রত্যেক শরণার্থীর জন্য জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (WFP) মাসে ৯ কিলোগ্রাম চাল দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে বর্তমানে তারা পাচ্ছে মাত্র ৩ কিলোগ্রাম চাল, ১ কিলোগ্রাম ডাল এবং ৫০০ মিলিলিটার রান্নার তেল।
স্বাভাবিকভাবেই এই সামান্য পরিমাণ খাবার তাদের জন্য যথেষ্ট নয়।
উগান্ডার বাসিন্দা, ৫৯ বছর বয়সী মার্টিন কোমল, যিনি পাঁচ সন্তানের বাবা, তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বলেন, “বর্তমানে আমরা একবেলা খাবার জোটাতেও হিমশিম খাচ্ছি। মাঝে মাঝে তো দু’বেলাও খাবার नसीब হয় না।
সাহায্য করার মতোও কেউ নেই। অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাই, কিন্তু ডাক্তাররা বলে, এটা তো শুধু ক্ষুধার কারণে হচ্ছে, বাড়ি ফিরে যাও।”
খাদ্য সংকটের কারণে শিশুদের অপুষ্টির হার বাড়ছে।
সেখানকার একটি হাসপাতালে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। হাসপাতালের পুষ্টি বিষয়ক কর্মকর্তা স্যামি ন্যানগা জানান, অনেক শিশুকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, ততক্ষণে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়।
গত এপ্রিল মাসে ১৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় এই সংখ্যা ছিল পাঁচ।
দক্ষিণ সুদানের সুজান মার্টিন তার দুই বছর বয়সী মেয়ের কথা বলতে গিয়ে বলেন, “আমরা প্রায়ই ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমোতে যাই।
তবে আমার বড় ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে খাবার পায়, যা তাদের একমাত্র ভরসা।”
এই খাদ্য সংকট শুধু শরণার্থীদের জীবনকেই বিপর্যস্ত করছে না, বরং এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপরেও।
সেখানকার এক ব্যবসায়ী চোল জোক জানান, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ৭ লক্ষ কেনিয়ান শিলিং (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা) আয় করতেন।
কিন্তু বর্তমানে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) কাকুমার প্রধান কলিন বুলেটি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যদি দ্রুত অন্য কোনো সাহায্য না আসে, তবে শরণার্থীদের একটি বড় অংশ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার শোনা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।
জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকারগুলোর এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (AP)