চীন-ইরান সংকট: উত্তেজনা কমাতে আহ্বান, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা চীন ও রাশিয়ার
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজনা কমাতে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন ও রাশিয়া। বৃহস্পতিবার এক টেলিফোন আলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। দুই নেতাই এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বেইজিং ও মস্কো উভয়ই ওয়াশিংটনের নীতির সমালোচনা করছে। তাদের মতে, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের কারণে অস্থিরতা বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
বৈঠকে পুতিন ও শি ইসরায়েলের পদক্ষেপের নিন্দা জানান এবং একে জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। তবে চীনের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি নিন্দা জানানো হয়নি, বরং দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। শি জিনপিং বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, এই সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর উপর প্রভাব রয়েছে এমন বৃহৎ শক্তিগুলোর উচিত উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করা, উল্টোটা নয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং তেহরানের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছর চীন ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মধ্যস্থতা করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে চীনের প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপকে দেখা হয়।
ইরানের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্কের কারণ হলো—তেল আমদানি, বাণিজ্য এবং বেইজিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই)। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান চীনের এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, ইরান চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়া ও চীন উভয় দেশই এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থন এবং গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীনের সীমিত সাফল্যের কারণে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীনের প্রচেষ্টা সফল হোক বা না হোক, এই অঞ্চলে সংকট নিরসনে তারা যে ভূমিকা রাখতে চাইছে, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে চীন আরও নির্ভরযোগ্য হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন