মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন রুশ নাগরিকের অভিবাসন বিষয়ক জটিলতা, যা বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রায় এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার পর, ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন আর্থার নিউমার্ক নামের একজন ব্যক্তি।
তিনি রাশিয়ার দুর্নীতি ফাঁস করার অভিযোগে দেশটিতে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেছিলেন। সম্প্রতি তার গ্রেপ্তার এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে তাকিয়ে অনেকেই অভিবাসন বিষয়ক নীতিগুলি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছেন।
**আর্থার নিউমার্কের যুক্তরাষ্ট্রে আগমন ও আশ্রয় আবেদন**
আর্থার নিউমার্ক ও তার পরিবার ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। রাশিয়ায় থাকাকালীন তিনি সেখানকার দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলেন, যার ফলস্বরূপ তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা বোধ করেন।
তাই পরিবারসহ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। এরপর থেকে তারা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন এবং তাদের জীবন নতুন করে সাজাচ্ছিলেন।
নিউমার্কের স্ত্রী ক্রিস্টিনা সেখানে সঙ্গীত শিক্ষকতা শুরু করেন, এবং তাদের সন্তানেরা স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করতে থাকে।
২০১৮ সালে, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে নিজেদের পরিচয় গোপন করার জন্য তারা তাদের নাম পরিবর্তন করেন। সবাই যখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন, ঠিক তখনই তাদের জীবনে আসে এই বিপর্যয়।
**গ্রেপ্তার ও আইসিই-এর ভূমিকা**
আশ্রয় আবেদনের শুনানির কয়েক দিন পরেই, গত ৩১শে মে, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা নিউমার্ককে গ্রেপ্তার করে। আইসিই হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা, যারা অভিবাসন আইন প্রয়োগ এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
গ্রেপ্তারের সময় নিউমার্ক তার পোষা পাখি বার্নিকে নিয়ে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন।
আইসিই কর্মকর্তাদের দাবি, নিউমার্ক তার ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করেছেন, যা তার আইনজীবীর মতে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই বিষয়ে নিউমার্কের আইনজীবী এলিজাবেথ ক্রুকোভা জানান, তার মক্কেল নিয়ম মেনেই সব কাজ করেছেন।
**পরিবারের উদ্বেগ ও আইনি লড়াই**
আর্থার নিউমার্কের আটকের পর তার পরিবার গভীর উদ্বেগে পড়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে সন্তানরা, এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় কমিউনিটি কলেজে পড়াশোনা করে এবং ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিংয়ের ওপর উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। তাদের আশঙ্কা, যদি তাদের রাশিয়াতে ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাবে।
আর্থার নিউমার্ককে বর্তমানে জামিন দেওয়া হয়েছে, তবে তার পরিবারের সদস্যদেরও জুলাই মাসে আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, নিউমার্কের পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
**যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি ও বিতর্ক**
আর্থার নিউমার্কের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নীতির কারণে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, তাদের অনেকেই কঠিন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
যদিও নিউমার্ক ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন এবং তার আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়া চলছিল, তবুও তার এই গ্রেপ্তার অনেকের মনে অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো শরণার্থীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন