নারীর শরীরে অবাঞ্ছিত লোম নিয়ে সমাজের ছুঁৎমার্গ এবং মানসিক আঘাত।
আমাদের সমাজে সৌন্দর্যের ধারণা সবসময়ই একটি নির্দিষ্ট ছাঁচে বাঁধা থাকে। ত্বক ফর্সা হওয়া থেকে শুরু করে শরীরের গড়ন, পোশাক-পরিচ্ছদ—সবকিছুতেই যেন একটি আদর্শ রূপকল্পের প্রতিফলন থাকতে হয়। এই ধারণার বাইরে গেলেই অনেক সময় শুনতে হয় নানা কথা, যা একজন মানুষের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায়।
সম্প্রতি, এমনই এক ঘটনার শিকার হয়েছিলেন এক নারী। তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে শরীরের লোম নিয়ে সমাজের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং এর মানসিক প্রভাবের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল একটি সিনেমা প্রদর্শনীতে। গরমে আরামের জন্য ওই নারী একটি টপ পরেছিলেন। তার আন্ডারআর্মসে (বগল) লোম ছিল, যা হয়তো তার নিজেরও সেভাবে খেয়াল ছিল না।
কিন্তু সেখানে উপস্থিত একজন নারী বারবার তার দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন, “বাহ, তুমি তো সাহসী, শরীরের লোম নিয়ে এতটুকু দ্বিধা নেই!” প্রথমদিকে হয়তো বিষয়টি তেমন গুরুতর মনে হয়নি, কিন্তু একই কথা যখন বারবার আসতে থাকে, তখন তা বিরক্তির কারণ হয়।
আসলে, ওই নারীর একটি শারীরিক সমস্যা ছিল— পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)। এই কারণে তার শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লোম হয়। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি সবসময়ই একটু অস্বস্তিতে থাকতেন।
তাই যখন কেউ তার শরীরের লোম নিয়ে মন্তব্য করছিলেন, তখন তা তার কাছে ভালো লাগেনি। বরং, নিজের শরীরের এই দিকটি নিয়ে তিনি যে হীনমন্যতায় ভুগছিলেন, সেই বিষয়টি যেন আরও বেশি করে সামনে চলে আসছিল।
একপর্যায়ে, ওই নারী আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। তিনি ওই ব্যক্তিকে থামতে বলেন এবং জানান যে, তার একটি শারীরিক সমস্যা রয়েছে এবং তিনি মোটেও সাহসী নন। বরং, এই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি সবসময়ই চিন্তিত থাকেন।
তার কথা শুনে ওই ব্যক্তি প্রথমে চুপ হয়ে যান, পরে দুঃখপ্রকাশ করে সেখান থেকে চলে যান।
এই ঘটনার পরে, অনেকে নারীর প্রতি সহানুভূতি দেখালেও, সমাজের কিছু মানুষের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে একজন নারীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা হচ্ছে, যা হয়তো তার কাছে খুবই ব্যক্তিগত একটি বিষয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক মানুষের শরীর তার নিজস্ব, এবং এর প্রতি সম্মান জানানো উচিত। অন্যের শরীরের খুঁত ধরা বা সেটিকে নিয়ে উপহাস করা—কোনোটিই শোভনীয় নয়।
আমাদের সমাজে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে, শরীরের গঠন এবং সৌন্দর্য নিয়ে অনেক বেশি চাপ থাকে। মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম—সবকিছুতেই যেন একটি বিশেষ ধরনের সৌন্দর্যের ধারণা প্রচার করা হয়, যা অনেকের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তাই, আমাদের উচিত—অন্যের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলার আগে সচেতন হওয়া, এবং প্রত্যেককে তার নিজের মতো করে বাঁচতে দেওয়া।
তথ্যসূত্র: পিপল