যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ফ্লোরিডার গ্লেডস কাউন্টি ডিটেনশন সেন্টারে (Glades County Detention Center) অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর সঙ্গে চুক্তি নবীকরণের পরেই এই অভিযোগগুলি সামনে এসেছে।
অভিযোগ, সেখানে থাকা অভিবাসীদের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়। এমনকি তাদের উপর শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এক সময় এই ডিটেনশন সেন্টারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল খোদ ICE। তারা জানিয়েছিল, এই সেন্টারের পরিবেশ তাদের বেঁধে দেওয়া মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এরপর তারা এখানে থাকা বন্দিদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু সম্প্রতি সেই চুক্তিকে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এখানকার বন্দিদের খাবার ও স্বাস্থ্যবিধির চরম অভাব রয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় অনেককে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া হয় না। এমনকি, কারাগারের কর্মীরা অনেক সময় বন্দিদের মারধর করে বলেও অভিযোগ।
২০২১ সালে সেখানকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লাইবেরিয়া থেকে আসা আব্রাহাম সানো (Abraham Sano) সিএনএনকে জানান, তাঁকে ‘হোলে’ (নির্যাতন কক্ষ) বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তাঁর শরীরে বেশ কয়েকদিন ধরে ‘মরিচের স্প্রে’র জ্বালা ছিল।
তাঁর আইনজীবী কেটি ব্ল্যাঙ্কেনশিপ জানিয়েছেন, সানো রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু পরে একটি ডাকাতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
আরেক বন্দী, মাইকেল ওয়ালেস (Michael Wallace), যিনি জ্যামাইকার নাগরিক, তিনি সিএনএনকে জানান, তাঁর মৃগী রোগের ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে তিনি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন।
এখানে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস লিকেজের ঘটনাও ঘটেছে। রোলিন ম্যানিং নামের এক বন্দী জানান, ২০২১ সালের ঘটনা এটি। গ্যাসের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করেনি।
গ্লেডস কাউন্টি শেরিফ অফিসের সঙ্গে ICE-এর চুক্তি অনুযায়ী, এই ডিটেনশন সেন্টারে কমপক্ষে ৫০০ জন বন্দীকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ICE-এর বন্দীদের পাশাপাশি, কাউন্টি ও ইউএস মার্শালদের আটক করা বন্দীদেরও রাখা হয়।
তবে, ডিটেনশন সেন্টারের পক্ষ থেকে বন্দীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। গ্লেডস কাউন্টি শেরিফ অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সবসময় ICE-এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে এবং নিশ্চিত করে যে এখানকার বন্দীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়।
ইমিগ্রেশন বিষয়ক আইনজীবী ব্ল্যাঙ্কেনশিপ জানিয়েছেন, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ডিটেনশন সেন্টারে বন্দীদের সঙ্গে হওয়া খারাপ আচরণের প্রমাণস্বরূপ তিনি ৩০ জনের বেশি বন্দীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করেছেন।
অন্যদিকে, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (DHS) একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গ্লেডস কাউন্টি ডিটেনশন সেন্টারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ICE জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে তাদের হেফাজতে থাকা বন্দীদের সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে দেখাশোনা করা হবে এবং এই বিষয়ে তারা খুবই সতর্ক।
ব্ল্যাঙ্কেনশিপের মতে, ডিটেনশন সেন্টারটি গ্লেডস কাউন্টির জন্য একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য হলো খরচ কমানো, যার ফলে বন্দীদের মৌলিক অধিকারগুলি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
২০০৬ সালে এই ডিটেনশন সেন্টার তৈরির জন্য প্রায় ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮০ কোটি টাকার বেশি) ঋণ নেওয়া হয়েছিল। সেই সময়, ফেডারেল সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে এখানে বন্দীদের রাখার ব্যবস্থা করাটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন