সিনেমা: ‘জস’-এর ৫০ বছর: একটি আতঙ্কের গল্প এবং তার সত্যতা
সাগরের গভীরে লুকিয়ে থাকা অজানা বিপদকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমা ‘জস’। রুপালি পর্দায় মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই মানুষের মনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করে ছবিটি।
২০২৩ সালে সিনেমাটি মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। এই উপলক্ষে, অনেকেই জানতে চান, এই শ্বাসরুদ্ধকর গল্পের পেছনে কি কোনো সত্য ঘটনা রয়েছে?
আসলে, ‘জস’ সিনেমার গল্পটি পুরোপুরি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি নয়। লেখক পিটার বেঞ্চলি এই সিনেমার গল্প লেখার সময় হাঙ্গরের শিকার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়েছিলেন।
ছোটবেলায় বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে তিনি হাঙর দেখেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা তাকে এই গল্প লিখতে অনুপ্রাণিত করে। তবে, গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরির ক্ষেত্রে তিনি কিছু ঘটনার সাহায্য নিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯১৬ সালে নিউ জার্সির সমুদ্র সৈকতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি হাঙর হামলার ঘটনার সঙ্গে ‘জস’ সিনেমার গল্পের কিছু মিল রয়েছে। সে বছর, জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে, বেশ কয়েক জন মানুষের ওপর হাঙরের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল।
এর মধ্যে কয়েকজন মারাও যায়। তবে, লেখক বেঞ্চলি, তাঁর লেখায় এই ঘটনার সরাসরি কোনো প্রভাব ছিল না বলে জানিয়েছিলেন।
সিনেমাটিতে ‘অ্যামিটি আইল্যান্ড’ নামে একটি কাল্পনিক দ্বীপের কথা বলা হয়েছে। এই দ্বীপটি আসলে বাস্তবে নেই।
সিনেমাটি নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের মারথা’স ভিনইয়ার্ড দ্বীপকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
‘জস’ সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য রয়েছে, যেখানে ‘কুইন্ট’ নামের এক চরিত্র একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘ইউএসএস ইন্ডিয়ানাপলিস’ জাহাজের ডুবির ঘটনা বর্ণনা করেন।
এই ঘটনাটি সত্যি। ১৯৪৫ সালের ৩০শে জুলাই, জাপানি সাবমেরিনের হামলায় ‘ইউএসএস ইন্ডিয়ানাপলিস’ ডুবে যায়। জাহাজে থাকা ১,১৯৬ জন নাবিকের মধ্যে প্রায় ৯০০ জন সাগরে ঝাঁপ দেন এবং কোনোমতে প্রাণে বাঁচেন।
এরপর, ক্ষুধার্ত হাঙরের দল তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভয়াবহ এই হামলায় বহু নাবিক প্রাণ হারান। সিনেমায় কুইন্টের মুখে সেই মর্মান্তিক ঘটনা শুনে দর্শকদের গা শিউরে ওঠে।
তবে, বাস্তবে শ্বেত হাঙরের আক্রমণ খুবই বিরল। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৫৮০ সাল থেকে সারা বিশ্বে ৯৪৯টি হাঙরের আক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে শ্বেত হাঙরের আক্রমণের ঘটনা ছিল ৩৫১টি, যার মধ্যে ৫৯টি ছিল মারাত্মক।
‘জস’ সিনেমার গল্পটি কাল্পনিক হলেও, মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। মানুষের অজানা ভীতি, প্রকৃতির প্রতিশোধ এবং টিকে থাকার লড়াই—এই বিষয়গুলো সিনেমার গল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
তথ্য সূত্র: পিপল