**মরক্কোতে ২০৩০ বিশ্বকাপ: রাস্তার কুকুর নিধন নিয়ে বিতর্ক**
মরক্কো ২০৩০ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর এরই মধ্যে দেশটির রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুর নিধন নিয়ে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বকাপের আগে শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে গিয়ে হাজার হাজার কুকুর নিধন করা হচ্ছে, যা পশুপ্রেমীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মরক্কোর কিছু শহরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিয়মিতভাবে কুকুর নিধন চলছে।
গুলি করে অথবা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে এসব কুকুর মারা হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোকে বিদেশি দর্শকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যদিও সরকারিভাবে এর কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্য ও রেবিস নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে।
প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হন, যাদের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইফ্রান শহরের ১৯ বছর বয়সী ফাতিমাজারাহ নামের এক তরুণী সিএনএনকে জানান, তিনি প্রায়ই রাস্তায় মৃত কুকুরের মরদেহ দেখতে পান।
তার মতে, গত এক বছরে এই নিধন প্রক্রিয়া অনেক বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে মাঝে মাঝে গুলি চলত, কিন্তু এখন যেন এটা একটা নিয়মিত ঘটনা।
এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পশু অধিকার সংস্থাগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার প্রোটেকশন কোয়ালিশনের (আইএডব্লিউপিসি) প্রধান লেস ওয়ার্ড সিএনএনকে বলেন, “কিছু লোক রাতে রাইফেল হাতে রাস্তায় নামে এবং কুকুরদের গুলি করে মারে।
আবার কিছু কুকুরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাদের বিষ প্রয়োগ করা হয়।”
তবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা কুকুরগুলোকে ধরে পশুচিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন এবং সেখানে তাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
ইফ্রানের প্রাদেশিক পর্যটন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ওমর জাইদ জানান, তারা শহরের রাস্তাগুলোকে পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করছেন, যা ২০৩০ ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ।
এদিকে, মরক্কোর সরকার যদিও বলছে, তারা ‘ট্র্যাপ-নিউটর-ভ্যাকসিনেট-রিলিজ’ (টিএনভিআর) প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা মূলত কুকুর নিধনের পরিবর্তে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার একটি মানবিক পদ্ধতি।
কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এর বাস্তবায়নে জটিলতা রয়েছে।
কারণ, স্থানীয় পৌরসভাগুলো এখনো পুরনো পদ্ধতিতে নির্ভরশীল এবং কুকুর নিধনের বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই।
কুকুর নিধনের এই প্রক্রিয়া শুধু পশুদের জন্যই বিপদ ডেকে আনছে না, বরং মানুষের জীবনকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
সম্প্রতি, বেন আহমেদ শহরে এক ব্যক্তি, আবদেররাহিম সউন্নিকে, কুকুরের দিকে ছোড়া গুলিতে আহত হতে হয়েছে।
পশু অধিকার সংস্থাগুলো ফিফার কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছে।
তাদের মতে, বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টের আগে এ ধরনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ফিফা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং মরক্কোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে।
অন্যদিকে, মরক্কোর সরকার বলছে, তারা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে এবং একটি নতুন আইন তৈরির পরিকল্পনা করছে।
এই আইনে রাস্তার পশুদের প্রতি আরও মানবিক আচরণ করার কথা বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে।
এরই মধ্যে, অভিনেতা রিকি জার্ভাইস এবং পিটার ইগানসহ অনেক তারকা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিকি ওয়ার্ডেন বলেছেন, “বিশ্বকাপে আসা ফুটবলপ্রেমীরা কুকুর ভালোবাসেন।
পশুদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ ফিফার জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
যদিও মরক্কো সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে, তবে বিশ্বকাপের আগে দেশটির এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, ফিফা এবং মরক্কো সরকার এই বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়।
বাংলাদেশেও রাস্তার পশুদের নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন