ফ্যাক্টরিতে তৈরি পরিবেশ-বান্ধব বাড়ি, প্রচলিত ধারণাকে ভাঙছে।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে টেকসই আবাসন ব্যবস্থার চাহিদা। উন্নত বিশ্বে এখন দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ‘প্রি-ফ্যাব’ বা আগে থেকে তৈরি করা বাড়ি।
এই ধরনের বাড়িগুলো শুধু পরিবেশ-বান্ধবই নয়, নির্মাণ খরচ এবং সময়ও কম লাগে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে এই ধরনের বাড়ির চাহিদা বাড়ছে, যা প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতির ধারণা বদলে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কলিন গুডসন তাদের পরিবারের জন্য এমন একটি বাড়ি তৈরি করেছেন, যা সম্পূর্ণভাবে সৌরবিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল। তার বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে এবং ব্যাটারির মাধ্যমে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা হয়।
এই বিদ্যুৎ দিয়ে বাড়িটির আলো, গরম এবং ঠান্ডার ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি রান্নার জন্য ইন্ডাকশন কুকারও ব্যবহার করা হয়। কলিন জানান, তার অফিসের সহকর্মীরা প্রথমে বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করলেও, এখন তারা তার বাড়ির আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেখে অবাক হন।
ঐতিহ্যবাহী বাড়ি তৈরির পদ্ধতির চেয়ে প্রি-ফ্যাব বাড়ির ধারণা বেশ আলাদা। সাধারণত, ‘স্টিক-বিল্ট’ পদ্ধতিতে কাঠ ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে সরাসরি নির্মাণ স্থানে বাড়ি তৈরি করা হয়।
এতে অনেক সময় লাগে এবং নির্মাণ সামগ্রী বৃষ্টি, তুষার ও বাতাসের সংস্পর্শে আসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। অন্যদিকে, প্রি-ফ্যাব বাড়িগুলো কারখানায় তৈরি করা হয়, ফলে নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান বজায় থাকে এবং দ্রুত সময়ে বাড়ি তৈরি করা যায়।
ইউনিটি হোমস, ব্রাইটবিল্ট হোম এবং জিও লজিকের মতো নিউ ইংল্যান্ডের কয়েকটি কোম্পানি এই ধরনের বাড়ি তৈরি করছে। তারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করারও সুযোগ দেয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রি-ফ্যাব বাড়ির চাহিদা বাড়ছে, তবে এখনও এটি প্রচলিত বাড়ির তুলনায় কম। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ হোম বিল্ডার্স-এর তথ্যমতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রি-ফ্যাব বাড়ির বাজার মাত্র ৩ শতাংশ।
তবে, ইউরোপে, বিশেষ করে সুইডেনে এই ধরনের বাড়ির প্রচলন অনেক বেশি।
প্রি-ফ্যাব বাড়ির অন্যতম সুবিধা হলো এর শক্তি-সাশ্রয়ী ডিজাইন। এই বাড়িগুলো সাধারণ বাড়ির চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি কার্যকর।
এছাড়া, কারখানায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নির্মাণের কারণে বাড়ির গুণগত মান অনেক ভালো থাকে।
এই ধরনের বাড়ি নির্মাণের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। নির্মাণ খরচ এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি। এছাড়া, জমির ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ স্থাপন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তবে, নির্মাতারা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রি-ফ্যাব বাড়ির দাম আরও কমবে, কারণ এই পদ্ধতিতে বহু-ইউনিট বিশিষ্ট বাড়ি তৈরি করা সম্ভব, যা নির্মাণ প্রক্রিয়াকে সহজ ও সাশ্রয়ী করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে টেকসই আবাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়বে। তাই, প্রি-ফ্যাব বাড়ির ধারণা শুধু উন্নত বিশ্বেই নয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও জনপ্রিয়তা পেতে পারে।
পরিবেশ-বান্ধব এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হওয়ায় এটি সবার জন্য বাসযোগ্য একটি ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন