ওকাভাঙ্গো ডেল্টা, বতসোয়ানার একটি অনন্য প্রাকৃতিক স্থান, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। প্রতি বছর এখানে আসা পর্যটকদের ক্যামেরাবন্দী করা ছবিগুলো মূলত স্থানীয়দের গল্প বলে না।
এই প্রেক্ষাপটে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং ডি বিয়ার্সের সহযোগিতায় ‘ওকাভাঙ্গো ইটারনাল’ নামক একটি প্রকল্পের অধীনে সেখানে বসবাসকারী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অভিনব এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের ফটোগ্রাফি এবং ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা তাদের অঞ্চলের গল্পগুলো নিজেরাই বলতে পারে।
কারাবো লেব্রনপিটার মইলওয়া, যিনি পেশায় একজন মোতোয়ানা বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার, এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি স্থানীয় তরুণদের বিনামূল্যে ফটোগ্রাফি শেখাচ্ছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করছেন।
তাঁর মতে, বতসোয়ানার প্রকৃতি বিষয়ক আলোকচিত্রের জগতে স্থানীয়দের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। তাঁর এই উপলব্ধি থেকেই তিনি অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে চান এবং চান, স্থানীয়রাই যেন তাদের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির গল্প ক্যামেরাবন্দী করে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারে।
২০২৪ সালে বনটে মোয়াম্বো নামের এক তরুণী এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দেন। তিনি জানান, ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান বেড়েছে এবং চারপাশের জগৎকে নতুনভাবে চিনতে পেরেছেন।
শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় স্যান সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারছে, যা আধুনিক যুগে কিছুটা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ‘স্টোরিটেলিং ক্লাব’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ফটোগ্রাফি বিষয়ক হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নকাশী নলেজ সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তারা ছবি তোলার সরঞ্জাম ও থাকার জায়গা পায়।
ছবি প্রদর্শনের জন্য একটি স্থানও এখানে রয়েছে, যা স্থানীয়দের সৃজনশীলতাকে আরও উৎসাহিত করে। বর্তমানে, এই ক্লাবে ৭০ জনের বেশি তরুণ-তরুণী যুক্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই এখন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ‘ভিজ্যুয়াল ভয়েসেস’ নামে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তারা ছবি তোলার প্রশিক্ষণ নেয় এবং অন্যদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে।
এই দলের সদস্য নকামোগেলাং মনোনায়াপুলা বলেন, “আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখি। আমি চাই, সবাই জানুক যে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে ছবি তোলে এবং পেশাদারভাবে কাজ করে।”
ওকাভাঙ্গো ডেল্টার এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের মাঝে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষিত হচ্ছে, তেমনি বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
কারাবো মনে করেন, এখন সময় এসেছে স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের নিজেদের গল্প বলার, এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি তাদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক