শিরোনাম: ফিলিপাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে নিখোঁজ ৩৪ জন, আগ্নেয়গিরির হ্রদে মিলতে পারে ১০০ জনের বেশি দেহ।
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা থেকে জুয়া খেলার অভিযোগে ৩৪ জন পুরুষ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, অনলাইন ককফাইটিং বা মোরগ লড়াইয়ের জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তাদের অপহরণ করা হয়েছে।
এরপর তাদের লাশগুলো একটি আগ্নেয়গিরির হ্রদে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৬ জন নিরাপত্তা কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিখোঁজ হওয়া পুরুষদের সন্ধানে কর্তৃপক্ষ দেশটির একটি আগ্নেয়গিরির হ্রদ, তাল লেকে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই তাদের লাশগুলো ফেলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ‘তোতয়’ নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ হ্রদটিতে ১০০ জনের বেশি মানুষের দেহ খুঁজে পেতে পারে।
এদের মধ্যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও রয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে এই ব্যক্তিরা নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে ম্যানিলা অ্যারেনা নামক একটি স্থানে শেষ দেখা গেছে।
এই অ্যারেনার ৬ জন নিরাপত্তা কর্মীর বিরুদ্ধেই অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। মূলত কোভিড মহামারীর সময় অনলাইন ককফাইটিংয়ের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় এই ধরনের অপরাধ বাড়ে।
ফিলিপাইনে ককফাইটিং বা মোরগ লড়াই একটি পরিচিত খেলা। যদিও বাংলাদেশে এটি অবৈধ, তবে বিশ্বের অনেক দেশে এর প্রচলন রয়েছে।
ককফাইটিংয়ের অনলাইন সংস্করণ ‘ই-সাবং’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এর মাধ্যমে দ্রুত মুনাফা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। জুয়া খেলার এই অনলাইন সংস্করণের বিস্তার লাভের ফলে অপরাধও বাড়ে।
নিখোঁজ জুয়াড়িদের ঘটনার পর অনলাইন ককফাইটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইনকোয়ারার ডটনেট জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি, যিনি ‘তোতয়’ ছদ্মনাম ব্যবহার করছেন, তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত তার ওপর ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হুমকির কারণে তিনি মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি জানান, অপহৃত ব্যক্তিদের তার মাধ্যমেই প্রতারণার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। এরপর অন্য একটি দল তাদের ওপর অত্যাচার চালাত।
জিএমএ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘তোতয়’ জানান, অপহৃতদের প্রথমে তার দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো এবং এরপর অন্য একটি দল তাদের হত্যা করত। এরপর তাদের দেহগুলো তাল লেকে ফেলে দেওয়া হতো।
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সবাইকেই হত্যা করা হয়েছে। যদি আমরা তাদের খুঁড়ি, তাহলে শুধু হাড়গোড় পাওয়া যাবে। তাদের শনাক্ত করাও সম্ভব হবে না।’
বিচার বিভাগের সচিব ক্রিসপিন রেমুল্লা গত ১৯ জুন সাংবাদিকদের জানান, তাল লেকে ডুবুরি নামিয়ে দেহাবশেষের সন্ধান করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমাদের অবশ্যই সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে, বিশেষ করে এ ধরনের ঘটনায়।’
তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে এবং এ বিষয়ে ৫ জন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জন পার্সি আলকোস স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, অন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তা করার জন্য নৌবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের এই অনুসন্ধানে যুক্ত করা হয়নি।
এই ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
তথ্য সূত্র: পিপলস