ফ্র্যাকিং: পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা।
হাইড্রোলিক ফ্র্যাকচারিং বা ফ্র্যাকিং একটি প্রযুক্তি যা খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে, শিলাস্তরের গভীরে উচ্চ চাপে জল, বালি এবং রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ প্রবেশ করানো হয়, যা শিলার ফাটল তৈরি করে এবং এর মাধ্যমে গ্যাস ও তেল উপরে উঠে আসে।
বর্তমানে বিশ্বে ফ্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জ্বালানি উত্তোলনের প্রবণতা বাড়ছে, কিন্তু এর পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফ্র্যাকিংয়ের এই দিকগুলি এবং বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রে ফ্র্যাকিংয়ের প্রসার ঘটেছে ব্যাপক হারে। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে, ফ্র্যাকিংয়ের কারণে দেশটির তেল উৎপাদন ৭৫ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণত ঘর গরম করতে এবং বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ফ্র্যাকিংয়ের সমর্থকরা একে জীবাশ্ম জ্বালানির একটি অপেক্ষাকৃত “পরিচ্ছন্ন” রূপ হিসেবে দেখেন, কারণ প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে কয়লার থেকে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়।
প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা একবার একে “সেতুবন্ধনকারী জ্বালানি” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
কিন্তু ফ্র্যাকিংয়ের কিছু গুরুতর সমস্যাও রয়েছে। এর প্রধান একটি হলো মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ। মিথেন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
২০১৯ সালের একটি গবেষণায় ফ্র্যাকিংয়ের কারণে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্র্যাকিংয়ের সময় প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত ১৫ থেকে ১৬ মিলিয়ন গ্যালন পর্যন্ত হতে পারে একটি কুয়াতে।
এছাড়া, এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থগুলি ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করতে পারে।
ফ্র্যাকিংয়ের ফলে স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফ্র্যাকিংয়ের সময় নির্গত হওয়া বিভিন্ন দূষিত পদার্থ, যেমন— কার্বনের কণা এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য, মানুষের শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ এবং ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে।
ফ্র্যাকিংয়ের কাছাকাছি বসবাসকারী অনেক মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। এছাড়া, ফ্র্যাকিংয়ের কারণে ভূমিকম্প হওয়ারও সম্ভবনা থাকে, বিশেষ করে বর্জ্য জল মাটির গভীরে পাম্প করার ফলে।
ফ্র্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে সমালোচকরা বলছেন যে, এর ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়ে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় খারাপ প্রভাব পরে। তারা এর পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের উপর জোর দেন।
যেমন—সৌর ও বায়ু শক্তি ব্যবহারের কথা বলা হয়।
বাংলাদেশে ফ্র্যাকিংয়ের সরাসরি প্রভাব এখনো দেখা যায় না, তবে ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাই, ফ্র্যাকিংয়ের ভালো ও খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে যদি গ্যাস বা তেল উত্তোলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়, তবে পরিবেশগত প্রভাবগুলি বিবেচনা করতে হবে এবং একটি সুচিন্তিত নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।
ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পরিবেশের উপর সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও, স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক