সুস্থ থাকতে ওজন নয়, বরং মনোযোগ দিন হাড় ও পেশী মজবুত করতে।
বর্তমান সময়ে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে স্বাস্থ্য সচেতনতাও। মানুষ এখন শুধু বেশি দিন বাঁচতে চায় না, চায় সুস্থ জীবন কাটাতে।
শরীরের ওজন কমানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি হাড় ও পেশীর স্বাস্থ্য ভালো রাখাটাও জরুরি। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের দুর্বলতা এবং জয়েন্টের ব্যথায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়ে।
তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য এখন থেকেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়সকালে সুস্থ থাকতে হলে শারীরিক সক্ষমতা ও নড়াচড়ার ক্ষমতা বজায় রাখা জরুরি। ক’দিন আগেই প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে ডায়েটিশিয়ান সিডনি নিটজোর্স্কি এবং অর্থোপেডিক সার্জন ড. জসেলিন উইটস্টেইন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তাঁদের মতে, হাড়ের ঘনত্ব সাধারণত ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এরপর থেকে এই ঘনত্ব ধরে রাখা এবং হাড়ের ক্ষয় কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব কমার প্রবণতা বেশি থাকে। মেনোপজের আগে নারীদের হাড়ের ঘনত্ব বছরে প্রায় ১% হারে এবং মেনোপজের পরে ২% হারে কমতে থাকে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ক্ষয় সাধারণত ১% হারে হয়। তাই অল্প বয়স থেকেই হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
অনেকেই মনে করেন, শুধু ব্যায়াম করলেই হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু শুধু কার্ডিও ব্যায়াম যথেষ্ট নয়।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে নিয়মিত হালকা ও মাঝারি ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এছাড়া, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করাটাও জরুরি।
আমাদের শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম শুধু হাড়ের জন্যেই নয়, হৃদপিণ্ড, পেশি এবং স্নায়ুর সঠিক কার্যকারিতার জন্যও প্রয়োজনীয়।
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে তা পূরণ করতে শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিতে শুরু করে।
সিডনি নিটজোর্স্কি জানান, ক্যালসিয়ামের জন্য সবচেয়ে ভালো উৎস হল খাবার। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।
দুধ, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার, ব্রোকলি, পালং শাক, ছোট মাছ (যেমন মলা, ঢেলা), এবং অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। ভিটামিন ডি-ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরি।
ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ২০০০ IU ভিটামিন ডি গ্রহণ করা হাড়ের জন্য উপকারী।
ডা. উইটস্টেইন বলেন, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার গ্রহণ করা জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই খাবারের তালিকায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার যোগ করা উচিত।
এই ধরনের খাবারে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, শরীরের কার্যকারিতা বাড়ে এবং হজমক্ষমতা উন্নত হয়। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ডায়েটে ফ্যাট-বিহীন প্রোটিন, যেমন ডিম, মাছ, মুরগি, এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন (যেমন: মটরশুঁটি, শিম) অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
জলপাই তেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন – বাদাম, চিয়া বীজ, এবং বিভিন্ন ধরনের মশলা (আদা, হলুদ) গ্রহণ করা উপকারী। এছাড়াও, ফল ও সবজিতে থাকা ফাইবার জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মতো হালকা ব্যায়াম করা উচিত। এর মধ্যে, ওজন বহন করে এমন ব্যায়াম (weight-bearing exercise) সপ্তাহে তিন দিন, পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম (resistance training) দুই দিন, এবং ব্যালেন্স ও হালকা আঘাত লাগে এমন ব্যায়াম (light-impact exercises) দুই দিন করা উচিত।
হালকা কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমেও হাড় ও পেশীর স্বাস্থ্য ভালো রাখা যেতে পারে। যেমন – দাঁত ব্রাশ করার সময় এক পায়ে দাঁড়ানো, টিভি দেখার সময় এক পায়ে ভর দিয়ে বসা, অথবা হাতের ছোট ছোট ব্যায়াম করা যেতে পারে।
হালকা জাম্পিং ব্যায়ামও হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। অল্প বয়স থেকে এই অভ্যাসগুলো তৈরি করতে পারলে ভবিষ্যতে হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
তাই, ওজন কমানোর পরিবর্তে শরীরের গঠন ও নড়াচড়ার দিকে মনোযোগ দিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন