ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ‘সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যু’ (assisted dying) বিষয়ক একটি বিল অনুমোদন করা হয়েছে। এই বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হলে, যাদের বাঁচার সম্ভাবনা ছয় মাসের কম, এমন রোগীরা কিছু শর্তসাপেক্ষে চিকিৎসকের সহায়তায় জীবন ত্যাগ করতে পারবেন।
বিতর্কের পর অনুষ্ঠিত হওয়া ভোটাভুটিতে বিলটি ২১ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক শেষে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি আসে। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩১৪টি, এবং বিপক্ষে ছিল ২৯১টি ভোট। এখন এটি উচ্চকক্ষে (House of Lords) পাঠানো হবে, যেখানে বিলটি চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
নতুন এই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি মারাত্মক অসুস্থ হন এবং তার বাঁচার সম্ভাবনা ছয় মাসের কম থাকে, তবে তিনি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবন ত্যাগ করতে পারবেন। তবে, এর জন্য তাকে সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারতে হবে।
এছাড়াও, এই প্রক্রিয়ার আগে দুইজন চিকিৎসক এবং একটি প্যানেলের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের ফলে দেশটি এখন এমন কয়েকটি দেশের সারিতে যুক্ত হলো, যেখানে সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যুর (assisted dying) অনুমতি রয়েছে। এর আগে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যেও (যেমন: ওরেগন, ওয়াশিংটন ও ক্যালিফোর্নিয়া) এই ধরনের আইনের প্রচলন রয়েছে।
এই বিল নিয়ে বিতর্কের মূল বিষয় ছিল, রাষ্ট্র মানুষের জীবনের শেষ সময়ে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে কিনা। বিলের সমর্থকরা যুক্তি দেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিরা তাদের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
তাদের মতে, এটি জীবন ও মৃত্যুর মধ্যেকার কোনো বিষয় নয়, বরং এটি হলো কীভাবে একজন মানুষ তার জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করতে চান, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা।
অন্যদিকে, বিলের বিরোধীরা নৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, জীবনের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টি সবার আগে দেখা উচিত। তাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আপত্তি ছিল বিলটি তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে, যা স্বচ্ছ ছিল না বলে তারা মনে করেন।
বিলটি নিয়ে বিতর্কের সময়, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জীবন-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহায়তা করার আগে, রোগীদের জন্য উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা এবং উপশমমূলক যত্ন (palliative care) নিশ্চিত করা উচিত।
এই ধরনের সেবা নিশ্চিত করা গেলে, রোগীদের শেষ সময়ে ভালোভাবে জীবন কাটানো সম্ভব।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্রিটেনে কাউকে আত্মহত্যায় সহায়তা করা একটি অপরাধ, যার জন্য ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কারো ইচ্ছায় কেউ যদি তার জীবন শেষ করে দেয়, তবে তা খুন অথবা নরহত্যার পর্যায়ে পড়ে।
তথ্য সূত্র: CNN