মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে যে, ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (Palestinian Authority) বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবে। এই রায়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশে হওয়া সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথ সুগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক ভাবে, এই মামলার সূত্রপাত হয় ২০০০ সালের প্রথম দিকে, দ্বিতীয় ইন্তিফাদা সময়কালে সংঘটিত কিছু মারাত্মক হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
মামলার মূল বিষয় ছিল, মার্কিন কংগ্রেসের ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করার এখতিয়ার আছে কিনা।
শুরুতে, একটি ফেডারেল আদালত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (Anti-Terrorism Act) অধীনে দেওয়া হয়েছিল। এই আইনে মার্কিন নাগরিকদের সন্ত্রাসবাদের কারণে হওয়া ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু পরে, নিউ ইয়র্কের একটি ফেডারেল আপিল আদালত এই রায় বাতিল করে দেয়, কারণ তাদের মতে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ওপর আদালতের এখতিয়ার নেই।
মামলাটি যখন বিভিন্ন আদালতে ঘুরছিল, তখন কংগ্রেস আইন সংশোধন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা করার সুযোগ তৈরি করে। ২০১৯ সালে করা এই সংশোধনী অনুযায়ী, যদি কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে তাদের ফেডারেল আদালতের এখতিয়ারের আওতায় আনা যাবে।
তবে, দ্বিতীয় সার্কিট ইউএস কোর্ট অফ আপিলস এই আইনটিকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর লঙ্ঘন হিসেবে রায় দেয়।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়ে জানায়, তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ‘সাংবিধানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ নেই। তাই, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে সংঘটিত ঘটনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলার এখতিয়ার দেওয়া হলে, তা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হবে।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস-এর নেতৃত্বে আদালত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষেই রায় দেন। বিচারপতি রবার্টস তার রায়ে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে হওয়া সহিংস কাজের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে।
একইসঙ্গে, দেশের বাইরে কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত হলে, সেক্ষেত্রেও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের দায়িত্ব।
এই রায়ের ফলে, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথ আরও সুগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: CNN