মহাকাশের দিগন্তে নতুন এক দুয়ার খুলতে চলেছে, যেখানে লুকিয়ে আছে অগণিত রহস্যের সমাধান। চিলির আটা aাকামা মরুভূমির চূড়ায় স্থাপিত হয়েছে অত্যাধুনিক ভেরা রুবিন অবজারভেটরি, যা আগামী দশ বছর ধরে রাতের আকাশের ছবি তুলবে।
এই টেলিস্কোপের লক্ষ্য শুধু ছবি তোলা নয়, বরং মহাবিশ্বের গভীরে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলো উন্মোচন করা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যাবে।
এই প্রকল্পের মূল আকর্ষণ হলো এর বিশাল ক্ষমতা। ভেরা রুবিন অবজারভেটরির আয়নাগুলো এত বেশি আলো সংগ্রহ করতে পারবে যে, তা দিয়ে রাতের আকাশের সবচেয়ে ক্ষীণ আলোকেও ধরা যাবে।
এই আলো কেন্দ্রীভূত হবে পৃথিবীর বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরায়, যার ক্ষমতা ৩২০০ মেগাপিক্সেল। ক্যামেরার আকার একটি এসইউভি গাড়ির সমান!
এটি একসাথে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো থেকে ছবি তৈরি করতে পারবে। প্রচলিত টেলিস্কোপের মতো এটি আকাশের একটি নির্দিষ্ট অংশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাকিয়ে থাকবে না।
বরং, এটি প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে নতুন একটি স্থানে ঘুরে যাবে, যা বিশাল এলাকা জুড়ে দ্রুত ছবি তোলার সুবিধা দেবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরের গ্রহ ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর সন্ধান করতে পারবেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, নেপচুনের কাছাকাছি সৌরজগতের বাইরে একটি বিশাল আকারের গ্রহ রয়েছে, যা এখনো আমাদের চোখে পড়েনি।
এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে সেই গ্রহ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এটি সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু শনাক্ত করতেও সাহায্য করবে।
এই বস্তুগুলো অন্যান্য নক্ষত্র জগৎ থেকে আসা এবং আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করে। এদের গতি অনেক বেশি হওয়ার কারণে সহজে চিহ্নিত করা কঠিন।
ভেরা রুবিন অবজারভেটরি এদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এদের উৎস সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে।
এছাড়াও, এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করবে। ছায়াপথ কীভাবে গঠিত হয়েছে, নক্ষত্রগুলো কীভাবে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এটি বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে।
গ্যালাক্সির গঠন এবং এর ভেতরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই ডেটাগুলি কাজে আসবে।
ভেরা রুবিন অবজারভেটরি ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি নিয়ে গবেষণা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই দুটি বিষয়ই মহাবিশ্বের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে, কিন্তু এদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত।
এই অবজারেটরির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নতুন তথ্য আবিষ্কার করতে পারবেন।
একশ বছর আগে, আপনি টেলিস্কোপে যে ডেটা পেতেন, তা হয়তো একটি ফটোগ্রাফিক প্লেটে নিতেন, বাড়িতে নিয়ে এসে আপনার ড্রয়ারে রেখে দিতেন। কিন্তু এখন এত বেশি ডেটা তৈরি হবে যে, তা বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতি তৈরি করতে হবে।
এই প্রকল্পের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, এর মাধ্যমে মহাকাশ সম্পর্কে আমরা যা জানতে পারবো, তার মূল্য অপরিমেয়।
ভেরা রুবিন অবজারেটরির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য শুধু বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, বরং এটি আমাদের মহাবিশ্বের প্রতি কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দেবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক