যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান এয়ারলাইন্সগুলো তাদের যাত্রীদের তথ্য দেশটির সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগের সঙ্গে শেয়ার করছে। সম্প্রতি এমন একটি খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
জানা গেছে, আটটি বৃহৎ মার্কিন এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন ‘এয়ারলাইন্স রিপোর্টিং কর্পোরেশন’ (এআরসি) নামক একটি সংস্থা তাদের টিকিট বিষয়ক বিশাল ডেটাবেস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) কাছে বিক্রি করেছে। এই ডেটাবেসে যাত্রী, তাদের আর্থিক বিষয় এবং ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
এই ডেটাবেসটিতে প্রবেশাধিকার পাবে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) এবং ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
ফেডারেল প্রোকিউরমেন্ট ডেটা সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, এআরসি-র সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-কে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ‘ট্রাভেল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম’ (টিআইপি) ডেটাবেসে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তির মূল্য প্রায় ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার।
জানা গেছে, আইসিই এই ডেটাবেসে ‘ভ্রমণকারী/লক্ষ্য’ করা ব্যক্তির নাম বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করতে পারবে। এর মাধ্যমে তারা ফ্লাইট সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য, যাত্রীর নাম এবং আর্থিক বিবরণী জানতে পারবে, যা সাধারণত পাওয়া কঠিন বা অসম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে ভ্রমণকারীদের, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে আসছেন, তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়তে পারে। এছাড়া, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বায়োমেট্রিক ডেটার ব্যবহার বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে আসা অনেক নাগরিকের ছবিসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্যও দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, ভ্রমণকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার কতটা সুরক্ষিত? জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে গোপনীয়তার অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের নীতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণকারীদের অধিকারও পরিবর্তিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রমণকারীদের সব সময় তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তাদের টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া, শরণার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী আইনজীবীদেরও তাদের মক্কেলদের টিকিট কেনার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, যাতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য কোনো ঝুঁকিতে না পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ডেটা শেয়ারিং ব্যবস্থা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে এর প্রভাব কেমন হবে, সেদিকে এখন সবার নজর।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার