যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) কর্মী ছাঁটাই, বিশ্বজুড়ে সংবাদ প্রচার নিয়ে উদ্বেগ।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ভয়েস অফ আমেরিকাতে (ভিওএ) ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে। শুক্রবার ৬৩৯ জন কর্মীকে ছাঁটাই নোটিশ ধরানো হয়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিশ্বজুড়ে খবর পরিবেশন করা এই মিডিয়া সংস্থার কার্যক্রমকে কার্যত বন্ধ করে দেওয়ার শামিল।
জানা গেছে, গত মার্চ মাস থেকে ভিওএ এবং এর তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (ইউএসএজিএম) প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
সংস্থাটির প্রাক্তন উপদেষ্টা কারি লেকের মতে, ‘দীর্ঘদিন ধরে জবাবদিহীতাহীন একটি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা’ ভেঙে দেওয়ার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই সংস্থার অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হতো।
ভিওএ’র যাত্রা শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, যখন তারা নাৎসি জার্মানির জনগণের কাছে আমেরিকার গণতন্ত্র সম্পর্কে খবর প্রচার করত। এরপর এটি বহু ভাষায় বিশ্বজুড়ে সংবাদ পরিবেশন করতে শুরু করে, বিশেষ করে যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের অভাব ছিল।
তবে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রায়ই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আসছিলেন।
ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের মধ্যে ভিওএ’র ফার্সি বিভাগের কর্মীরাও রয়েছেন। ইসরায়েলের আক্রমণের পর তাদের প্রশাসনিক ছুটি বাতিল করে ইরানের জন্য খবর প্রচার করতে বলা হয়েছিল।
জানা গেছে, শুক্রবার এই বিভাগের তিনজন সাংবাদিককে অফিসের বাইরে সিগারেট বিরতির সময় আইডি কার্ড জমা দিতে বলা হয় এবং পরে তাদের আর অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ভিওএ’র প্রধান জাতীয় সংবাদদাতা স্টিভ হারম্যান এই ছাঁটাইকে ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, এর ফলে ‘যুক্তরাষ্ট্র তার সবচেয়ে কার্যকর সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ারকে নিজেই নীরব করে দিল’।
ভিওএ-র কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প-সমর্থিত ওয়ান আমেরিকান নিউজ নেটওয়ার্ক তাদের সংকেত ব্যবহারের প্রস্তাব দিলেও, সংবাদ সংস্থাটি টিকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
আদালতে ভিওএ-র কার্যক্রম টিকিয়ে রাখার জন্য যারা লড়ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন জেসিকা জেরেট, কেট নিপার এবং প্যাটসি উইডাকুসওয়ারা। তাদের আশঙ্কা, ভিওএ বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার আদর্শকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
সংবাদ মাধ্যম এবং বিনোদন বিষয়ক লেখক ডেভিড বাউডারের মতে, ভিওএ বন্ধ হয়ে গেলে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে দর্শকদের অভ্যাস পরিবর্তন হতে পারে, যা এর টিকে থাকার সম্ভাবনা আরও কমিয়ে দেবে।
বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।