কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা এআই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল জগৎ-এ আসছে নতুন নতুন পরিবর্তন। এবার সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বিনোদন জগতে।
সম্প্রতি, ‘ওহচ্যাট’ নামের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যেখানে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলিব্রেটিদের ‘ডিজিটাল প্রতিরূপ’ তৈরি করা হচ্ছে। এই ডিজিটাল প্রতিরূপগুলো ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথোপকথন করতে, ছবি পাঠাতে এবং এমনকি, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যৌন উদ্দীপক বার্তা আদান-প্রদান করতেও সক্ষম।
এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত ‘অনলিফ্যানস’-এর ধারণার সঙ্গে এআই-এর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। ‘অনলিফ্যানস’-এর মতো, এখানেও ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাদের পছন্দের ডিজিটাল অবতারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারীরা প্রতি মাসে ৪.৯৯ ডলার (প্রায় ৫৫০ টাকা) খরচ করে টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারেন, অথবা ৯.৯৯ ডলার (প্রায় ১,১০০ টাকা) খরচ করে ভয়েস নোট ও ছবি পেতে পারেন। এমনকি, ২৯.৯৯ ডলার (প্রায় ৩,৩০০ টাকা) খরচ করে ভিআইপি (VIP) সুবিধার মাধ্যমে অবতারের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগও রয়েছে।
এই প্ল্যাটফর্মের অন্যতম আকর্ষণ হলেন ব্রিটিশ মডেল এবং অভিনেত্রী কেটি প্রাইস। তাঁর ডিজিটাল সংস্করণ ‘জর্ডান’-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ধরনের ‘স্পাইসি’ অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পান।
কেটি প্রাইস জানিয়েছেন, তাঁর ডিজিটাল অবতার তৈরি হওয়াটা তাঁর কাছে একইসঙ্গে ‘আশ্চর্যজনক’ এবং ‘আবেগপূর্ণ’ লেগেছে।
প্ল্যাটফর্মটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ডিজিটাল প্রতিরূপ তৈরি করার জন্য তারা সেলিব্রেটিদের কিছু ছবি ও ৩০ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ ব্যবহার করে। এরপর, মেটা’র বৃহৎ ভাষা মডেল (Large Language Model) ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করা সম্ভব হয়।
এই প্ল্যাটফর্মটি এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ওহচ্যাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের প্রায় ২ লক্ষ ব্যবহারকারী রয়েছে, যাদের অধিকাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।
শুধু তাই নয়, এই প্ল্যাটফর্মে বর্তমানে ২০ জন শিল্পী কাজ করছেন। ডিজিটাল অবতার তৈরি করে শিল্পীরা তাঁদের আয়ের ৮০ শতাংশ পান, বাকি ২০ শতাংশ প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষ রাখে।
তবে, এই ধরনের প্রযুক্তির উত্থান কিছু গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক প্রশ্নও তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি করতে পারে, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এছাড়াও, ডিজিটাল অবতারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সুনাম ক্ষতিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, ড. এলিনর ড্রেজ মনে করেন, এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো মানুষের জীবন থেকে এক প্রকারের ‘প্রকৃত সম্পর্ক’ কেড়ে নিচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সান্দ্রা ওয়াখটার-এর মতে, মানুষের সঙ্গে কম্পিউটারের মিথস্ক্রিয়াকে উৎসাহিত করা এবং এর থেকে অর্থ উপার্জন করা সামাজিক দিক থেকে কতটা উপকারী, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি। ব্যবহারকারীদের জানতে হবে যে তাঁরা একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন নাকি একটি এআই-এর সঙ্গে।
এছাড়াও, সেলিব্রেটিদের ডিজিটাল অবতার তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
ভবিষ্যতে, এই ধরনের ডিজিটাল প্রতিরূপ আরও বেশি জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এর ভালো-মন্দ দুটি দিকেই খেয়াল রাখতে হবে।
প্রযুক্তিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং ব্যবহারকারীর সুরক্ষাকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন