মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে তেহরানের ওপর সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেছেন। জানা গেছে, তিনি দুই সপ্তাহের জন্য এই সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিয়েছেন, যাতে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা যাচাই করা যায়।
সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে কিছু হামলা চালায়, যার প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ আসে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত দেয়, তেমনি সম্ভাব্য একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা করবে।
তবে, এই সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে, হামলার সম্ভাবনা এখনো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পেছনে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় কারণই বিদ্যমান।
অন্যদিকে, মিত্র দেশগুলোর চাপ এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও তিনি অবগত ছিলেন।
ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের মধ্যে সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ এবং জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ।
তারা ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা এবং এর ফল নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া, পররাষ্ট্র বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ অনেকে ইরানের ওপর দ্রুত হামলার পক্ষে ছিলেন।
তারা মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে এটি জরুরি।
তবে, সাবেক কৌশলবিদ স্টিভ ব্যাননসহ অনেকে আবার দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনেও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করেন, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানানো হয়।
তবে, ট্রাম্প সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল।
যেমন, তিনি বিভিন্ন সময়ে সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখালেও, শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে গুরুত্ব দিয়েছেন।
এছাড়া, তিনি নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কিছুটা কমতে পারে, তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
দুই সপ্তাহের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা সফল না হলে, পরিস্থিতি আবারও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
একইসঙ্গে, ইসরায়েল এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন