শিরোনাম: অলিম্পিক স্বপ্নভঙ্গের পর: ২৯ ঘণ্টার সাঁতারে বিশ্বজয়, এক অদম্য সাঁতারুর গল্প
দীর্ঘ সমুদ্র সাঁতারে শরীর কতটা সইতে পারে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমেরিকান সাঁতারু রেবেকা ম্যান। ২০১৯ সালে অলিম্পিক দলে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর, খেলাধুলার জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছিলেন এক কঠিন পথ।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউই, মোলোকাই ও লানাইয়ের মাঝে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘মাউই নুয়ি ট্রাই-চ্যানেল ক্রসিং’ সাঁতার কেটে বিশ্ব জয় করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই সাঁতারের প্রতি ছিল রেবেকার বিশেষ আকর্ষণ। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি লানাই থেকে মাউইতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। এরপর ২০১৭ সালের বিশ্ব অ্যাকুয়াটিক চ্যাম্পিয়নশিপে ২৫ কিলোমিটার সাঁতার কেটে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দেন।
তবে মাউই নুয়ি ট্রাই-চ্যানেল ক্রসিং ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রায় ২৯ ঘণ্টা ধরে একটানা সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে রেবেকা জানান, শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক দিক থেকে এই সাঁতার ছিল অনেক কঠিন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি নিজেকে সাহস জুগিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি নিজেকে সবসময় মনে করিয়েছি, সাঁতার কাটতে ভালো না লাগলেও, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালাতে চাই না।”
সাঁতারের সময় তিনি লবণাক্ত পানির কারণে শারীরিক কিছু সমস্যায় পড়েছিলেন। তার নাকের ছিদ্র ফুলে গিয়েছিল, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। এমনকি তার আলজিহ্বা (uvula) ফুলে গিয়ে মুখের ভেতরে নেমে এসেছিল।
সাঁতার শেষ হওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত তিনি কিছু গিলতে পারছিলেন না।
সাঁতারের দীর্ঘ সময় রেবেকার মধ্যে কিছু মানসিক অস্থিরতাও দেখা দেয়। তিনি জানান, ও সি ডি (OCD) -তে আক্রান্ত হওয়ায় তার মধ্যে কিছু প্যানিক অ্যাটাকও হয়েছিল। তবে তিনি সবসময় পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে শিখেছেন।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, “কঠিন পরিস্থিতি আমার ভেতরের সেরা মানুষটাকে বের করে আনে। এটা আমাকে নিজের সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে।”
এই সাঁতার যেন শুধু একটা প্রতিযোগিতা ছিল না, বরং নিজের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল। রেবেকা তার এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন একটি স্মৃতিকথায় এবং একটি কিশোর উপন্যাসও লিখেছেন।
বর্তমানে তিনি সাঁতারের জগতে আবারও ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রেবেকা ম্যানের এই অসাধারণ জয় প্রমাণ করে, মানুষের ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিক দৃঢ়তা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
তথ্য সূত্র: পিপল