মঙ্গোলিয়ার বুকে, গোবি মরুভূমিতে প্রতি বছর শীতকালে অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যতিক্রমী উৎসব – ‘দশ হাজার উট উৎসব’। এই উৎসব শুধু একটি আনন্দানুষ্ঠান নয়, বরং মঙ্গোলীয় সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা তাদের ঐতিহ্য আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
গোবি মরুভূমি, যা মধ্য এশিয়ার একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত, সেখানে এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো – ব্যাকট্রিয়ান উট। এই দ্বিকুঁজবিশিষ্ট উটগুলি মঙ্গোলিয়ার পশুসম্পদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হল এই উট প্রজাতি এবং তাদের থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের প্রচার ও প্রসার করা।
উৎসবের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল উটের শোভাযাত্রা। নানান রঙের পোশাক পরা মানুষজন তাদের উটদের সজ্জিত করে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়, যা দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
এছাড়াও, এখানে উটের দৌড়, পোলো ম্যাচ, ঐতিহ্যবাহী তীরন্দাজি প্রতিযোগিতা, গান ও নাচের মতো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় কারিগররা তাদের তৈরি উলের পোশাক, কম্বল এবং উটের দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন।
নব্বইয়ের দশকে মঙ্গোলিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসানের পর, দেশটির অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসে। সেই সময় উটের মাংসের চাহিদা বাড়ায় অনেক উটকে জবাই করা হয়েছিল।
ফলে, উটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। ১৯৯৭ সালে ‘অ্যামেজিং গোবি ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন’ এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসে।
তারা ‘দশ হাজার উট উৎসব’ শুরু করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল উটের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।
বর্তমানে, মঙ্গোলিয়ায় ব্যাকট্রিয়ান উটের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজারে পৌঁছেছে, যা উৎসবের সফলতার প্রমাণ।
পর্যটন এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অনেক পরিবার এখন পর্যটকদের উট ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়ে এবং উলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
এই উৎসবের মাধ্যমে স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এবং পর্যটকদের কাছে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরছে।
এই উৎসব শুধু মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রতি বছর শীতকালে অনুষ্ঠিত এই উৎসব মঙ্গোলিয়ার মানুষের জীবনযাত্রায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার