হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের একটি জনপ্রিয় সৈকত, হোনোনাউ বে-তে, সম্প্রতি সমুদ্র আর্চিনের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার প্রবাল প্রাচীরগুলো মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার বাস্তুতন্ত্রে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এর ফলে প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হারাচ্ছে এবং এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
হাওয়াইয়ের এই অঞ্চলের স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে ডুবুরি ও স্নরকেলারদের আনাগোনা বেশ পুরোনো। কিন্তু বর্তমানে এখানকার পরিবেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
স্থানীয় গবেষণা বলছে, সমুদ্র আর্চিনের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় প্রবাল প্রাচীরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই আর্চিনগুলো প্রবালের কঙ্কাল খেয়ে ফেলে, ফলে তাদের ক্ষয় হতে শুরু করে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, শীঘ্রই হয়তো এই প্রবাল প্রাচীরগুলো তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ক্ষমতা হারাবে।
এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অতিরিক্ত মাছ ধরাকে। অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে, আর্চিনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যে মাছগুলো সাহায্য করে, তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
ফলে আর্চিনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং তারা প্রবালের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দূষণ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে প্রবালের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
গবেষণা বলছে, হোনোনাউ বে-তে প্রতি বর্গমিটারে গড়ে ৫১টি আর্চিন বাস করে, যা বিশ্বের অন্যান্য প্রবাল প্রাচীর এলাকার তুলনায় অনেক বেশি।
যেখানে ৪০ বছর আগে এই অঞ্চলের প্রবালগুলো বছরে প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১৫ কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করতে পারতো, সেখানে বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৫ কেজিতে।
অর্থাৎ, প্রবালের বৃদ্ধি ৩০ গুণ পর্যন্ত কমে গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রবালের ক্ষয় রোধ করতে হলে অন্তত ২৬ শতাংশ প্রবাল জীবিত থাকতে হবে, তবে তাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আরও বেশি প্রবালের উপস্থিতি প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওয়াইয়ের এই পরিস্থিতি উপকূলীয় এলাকার জন্য একটি সতর্কবার্তা।
প্রবাল প্রাচীরগুলো সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একে সমুদ্রের “বৃষ্টি বন” হিসাবেও বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি বিভিন্ন সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল।
এছাড়াও, এটি উপকূলকে ঝড় এবং সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষা করে।
এই সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় কিছু সংগঠন মাছ ধরা কমানো, জলের গুণগত মান উন্নয়ন এবং প্রবাল পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই প্রবাল প্রাচীরগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্যও এই ঘটনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বনগুলোতেও দূষণ, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায়।
তাই, হাওয়াইয়ের এই অভিজ্ঞতা আমাদের সতর্ক করে, কীভাবে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
তথ্য সূত্র: সিএনএন