ইরান সংকট: কূটনৈতিক পথে সমাধান নাকি সামরিক হস্তক্ষেপের পথে?
পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা আবারও বাড়ছে, ইসরায়েল-ইরান সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, কূটনৈতিক সমাধান নাকি সামরিক হস্তক্ষেপের পথে হাঁটবে উভয়পক্ষ, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া দুই সপ্তাহের সময়সীমা ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে, যা এই সংকটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মূলত ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা। ইসরায়েল মনে করে, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যা তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
অন্যদিকে, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য তৈরি করছে বলে দাবি করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
সংকট নিরসনে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা এখনো একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। জেনেভায় ইরান ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, তবে তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এই আলোচনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, সংকট সমাধানে ইরানের নীতিনির্ধারকদের নমনীয় হতে হবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিতে হবে।
প্রস্তাবটি ছিল, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সীমিত করবে এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণ পরমাণু জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবে।
তবে, কূটনৈতিক আলোচনা সফল না হলে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইরানের ফোরদো পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি একদিকে যেমন কূটনৈতিক আলোচনার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তেমনি তা সংকটকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
এছাড়াও, ইসরায়েল একাই ফোরদো পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে কিনা, সেই সম্ভাবনাও বিবেচনা করা হচ্ছে। অতীতে, ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে সফল অভিযান চালিয়েছিল।
তবে, ফোরদোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলা চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং কঠিন হতে পারে।
সংকট দীর্ঘায়িত হলে, ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং দেশটির বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে। ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করা গেলেও, সংকট সহজে মিটবে না।
গাজা সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, এই সংকট সমাধানে একটি নতুন প্রস্তাব আসতে পারে। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
তবে, এই ধরনের পদক্ষেপের সফলতা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ওপর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সংকট নিরসনে এখনো কূটনৈতিক পথ খোলা রয়েছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে ইরানকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এক্ষেত্রে, হয় তাদের নমনীয় হতে হবে, নতুবা সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, হয়তো সংকট সমাধানে দুই নম্বর পথ অথবা চার নম্বর পথ বেছে নেওয়া হতে পারে, তবে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন