শিরোনাম: আমেরিকার ‘স্লিপট্রেইলার’: অসহায় মানুষের জন্য আশ্রয়, নতুন দিশা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের জেসন ক্রিস্টেনসেন নামের এক ব্যক্তি তাঁর এলাকায় আশ্রয়হীন মানুষের জন্য এক অভিনব সমাধান খুঁজে বের করেছেন। তিনি তৈরি করেছেন ‘স্লিপট্রেইলার’।
এটি দেখতে অনেকটা চলন্ত গাড়ির মতো, যার ভেতরে রয়েছে আটটি আলাদা কক্ষ, যেখানে আশ্রয়হীন মানুষজন নিরাপদে থাকতে পারেন। এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি বর্তমানে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
২০১৬ সালে ক্রিস্টেনসেন যখন কাজে যাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যক্তিকে ফুটপাতে ঘুমাতে দেখেন। তখনই তাঁর মনে হয়, “কেন কেউ এদের জন্য কিছু করছে না?” তাঁর মনে হয়, তিনি নিজেও তো কিছু করতে পারেন।
এরপরই তিনি ‘স্লিপট্রেইলার’-এর ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।
‘স্লিপট্রেইলার’-এর প্রতিটি কক্ষে রয়েছে একটি করে বিছানা এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জায়গা। ঘরগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বাইরের আলো প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু বাইরের কেউ সহজে দেখতে পাবে না।
প্রতিটি কক্ষের দরজা বন্ধ করার ব্যবস্থা আছে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ক্রিস্টেনসেনের মূল লক্ষ্য ছিল আশ্রয়হীন মানুষদের একটি নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া, যেখানে তাঁরা মানসিক শান্তির সঙ্গে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে পারেন।
ক্রিস্টেনসেন স্থানীয় একটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন, যারা মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে থাকার ব্যবস্থা করতে সহায়তা করে।
তিনি চান, ‘স্লিপট্রেইলার’-এর মাধ্যমে আশ্রয়হীন ব্যক্তিরা যেন একটি স্থিতিশীল পরিবেশে ফিরে আসতে পারে এবং তাঁদের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারে। এর মাধ্যমে তাঁরা দীর্ঘমেয়াদী আবাসনের সুযোগ পেতে পারে।
পরীক্ষামূলকভাবে, ক্রিস্টেনসেন ওরেগনের লেবাননে এই ‘স্লিপট্রেইলার’ স্থাপন করেন। সেখানে তিন মাস থাকার সময় তাঁরা ৩৫ জন মানুষকে আশ্রয় দেন।
তাঁদের মধ্যে ১৮ জন স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। একটি উদাহরণ হিসেবে, একজন নারী তাঁর গাড়িতে থাকতেন এবং দুটি কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাতেন।
‘স্লিপট্রেইলার’-এ থাকার সুযোগ পাওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে অর্থ সঞ্চয় করতে শুরু করেন এবং অবশেষে একটি স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন।
ক্রিস্টেনসেনের এই উদ্যোগ এখন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। তিনি চান, তাঁর এই ধারণা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাক, যাতে সবাই নিজ নিজ এলাকায় এমন সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।
বর্তমানে তিনি এই প্রকল্প আরও বড় আকারে প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়াও, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন, যাতে আরও বেশি মানুষ এতে অংশ নিতে পারে।
ক্রিস্টেনসেন মনে করেন, এই ধরনের উদ্যোগ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।
তাঁর মতে, আশ্রয়হীন মানুষদের প্রথমে মানসিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, যা তাঁদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষ যখন নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে, তখন তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
তথ্য সূত্র: পিপল