বিখ্যাত অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ড, যিনি “উইজার্ড অফ ওজ” ছবিতে ডোরোথির চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাঁর জীবনাবসান হয় ১৯৬৯ সালের ২২শে জুন। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে লন্ডনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ঘুমের ওষুধ অতিরিক্ত সেবনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনা আজও চলচ্চিত্র প্রেমীদের হৃদয়ে গভীর শোকের সৃষ্টি করে।
জুডি গারল্যান্ডের আসল নাম ছিল ফ্রান্সেস ইথেল গাম। ১৯২২ সালের ১০ই জুন জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
“উইজার্ড অফ ওজ” ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় তাঁকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত করে তোলে।
কিন্তু খ্যাতির শিখরে আরোহণের পাশাপাশি, তিনি ব্যক্তিগত জীবনে নানা ধরনের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদ, মাদক এবং খাদ্য আসক্তির মতো সমস্যাগুলির শিকার ছিলেন।
জুডি গারল্যান্ডের কন্যা, বিখ্যাত অভিনেত্রী ও গায়িকা লিজা মিনেল্লি তাঁর মায়ের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বলেন, “আমার মনে হয় মা সম্ভবত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।” তিনি আরও জানান, মা যেন সবসময় একটা “টট ওয়্যার”-এর উপর দিয়ে হেঁটেছেন, সবসময় উদ্বেগে থাকতেন এবং সম্ভবত কোনোদিনও সত্যিকারের সুখ খুঁজে পাননি।
অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল নানা ঘাত-প্রতিঘাতে পরিপূর্ণ। তিনি মোট পাঁচবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
তাঁর পঞ্চম স্বামী ছিলেন মিকি ডিন্স। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি নাকি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এই প্রথমবার আমি সত্যিই সুখী হয়েছি। অবশেষে, আমাকে কেউ ভালোবাসে।”
জুডি গারল্যান্ডের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লন্ডনের এক তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনাকে তিনি “অসাবধানতাবশত আত্ম-অতিরিক্ত সেবন” হিসেবে উল্লেখ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করতেন, যা সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়।
জুডি গারল্যান্ডের প্রয়াণে সারা বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর ভক্তরা তাঁদের প্রিয় অভিনেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২০,০০০ মানুষ তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রথমে তাঁকে নিউ ইয়র্কের ফার্নক্লিফ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে, তাঁর পরিবারের ইচ্ছানুসারে, ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউড ফোরএভার গোরস্থানে তাঁকে পুনরায় সমাহিত করা হয়।
এই গোরস্থানে “জুডি গারল্যান্ড প্যাভিলিয়ন” তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সমাধিস্থ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুডি গারল্যান্ডের অবদান শুধু অভিনয় জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন, নিজের টেলিভিশন শো করেছেন এবং বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন।
তাঁর “ওভার দ্য রেইনবো” গানটি আজও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
“উইজার্ড অফ ওজ” ছবিতে তাঁর অভিনয় এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে, ২০১৮ সালে তুরিনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ছবিটিকে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
জুডি গারল্যান্ডের জীবন ছিল একদিকে যেমন সাফল্যের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত, তেমনই ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্টে ভরা। তাঁর মৃত্যু আজও চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তথ্যসূত্র: পিপল