সুইজারল্যান্ডের আল্পস: ট্রেনের সফর আর এক রূপকথার গ্রাম
কল্পনা করুন, পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা এক স্বপ্নপুরীর কথা।
যেখানে কোলাহল নেই, গাড়ির আনাগোনা নেই, শুধু নিস্তব্ধতা আর প্রকৃতির অপরূপ শোভা।
এমন একটি জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে প্রকৃতির নীরবতা যেন এক শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। জায়গাটি হলো সুইজারল্যান্ডের ওয়েঙ্গেন (Wengen)।
আল্পস পর্বতমালার কোলে অবস্থিত ওয়েঙ্গেন যেন এক জীবন্ত রূপকথা। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামটি শুধু ট্রেনের মাধ্যমেই পৌঁছানো যায়।
প্রকৃতির নীরবতা আর নির্মল পরিবেশে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেয় এই গ্রাম। শীতকালে বরফের চাদরে মোড়া পাহাড় আর গ্রীষ্মে সবুজ ঘাস—ওয়েঙ্গেন সব ঋতুতেই তার সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়।
এখানকার বাড়িগুলো ঐতিহ্যবাহী সুইস স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি, যা এই গ্রামের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে।
ওয়েঙ্গেনের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এখানকার বার্ষিক ‘ইন্টারন্যাশনাল লবারহর্ন রেস’। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রীড়াবিদরা অংশ নেন।
এছাড়াও, ওয়েঙ্গেনের অবস্থান লটারব্রুনেন উপত্যকার কাছাকাছি হওয়ায় পর্যটকদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানকার শান্ত পরিবেশ, পরিষ্কার বাতাস এবং মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেকোনো ভ্রমণকারীর মন জয় করে।
ওয়েঙ্গেন এখনো অনেক ভ্রমণকারীর কাছে খুব পরিচিত নাম নয়, যেমনটা সেন্ট মরitz, গ্যাস্টাড বা জার্মাট-এর মতো নয়।
তবে এখানকার নতুন ফাইভ-স্টার হোটেল ‘গ্র্যান্ড হোটেল বেলভেদেরে’ (Grand Hotel Belvedere)-এর আগমনের পর এই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। হোটেলটি আধুনিক নকশা এবং সুইস ঐতিহ্যের এক চমৎকার মিশ্রণ।
ওয়েঙ্গেনে ঘোরার জন্য পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভালো। এখানকার স্থানীয় দোকানগুলোতে ভালো মানের আউটডোর সরঞ্জাম এবং হস্তনির্মিত নানান জিনিস পাওয়া যায়।
এখানকার কোপ (Coop) গ্রোসারি দোকানেও স্থানীয় অনেক সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
ওয়েঙ্গেনের আশেপাশে ট্রেকিং-এর (Trekking) চমৎকার সুযোগ রয়েছে। এখানকার ‘প্যানোরামা ট্রেইল’ (Panorama Trail) ধরে হেঁটে গেলে আল্পসের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়, যা কল্পনার জগৎকেও হার মানায়।
এছাড়া, ইয়ংফ্রাউ অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন ইয়ংফ্রাউজোখ-এ (Jungfraujoch) যাওয়াও একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
ওয়েঙ্গেন সারা বছর ধরেই ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত, তবে গ্রীষ্ম এবং শীতকালে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে।
শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করলে বসন্ত বা শরৎকালে ভ্রমণ করা যেতে পারে।
ওয়েঙ্গেনে পৌঁছানোর জন্য, ইন্টারলাকেন (Interlaken) থেকে ট্রেনে করে লটারব্রুনেন (Lauterbrunnen) যেতে হবে।
এরপর ওয়ার্ঙ্গেনাল্প রেলওয়ে (Wengernalp Railway) ধরে ওয়েঙ্গেনে যাওয়া যায়। এই পথটুকু প্রায় ১২ মিনিটের, যা লটারব্রুনেন উপত্যকা এবং ইয়ংফ্রাউ শৃঙ্গের অসাধারণ দৃশ্য দেখিয়ে নিয়ে যায়।
যারা গাড়ি নিয়ে যেতে চান, তারা লটারব্রুনেনে গাড়ি পার্ক করতে পারেন।
ওয়েঙ্গেন ভ্রমণের খরচ অন্যান্য ইউরোপীয় গন্তব্যের মতোই। তবে, প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত পরিবেশে ছুটি কাটানোর জন্য ওয়েঙ্গেন হতে পারে একটি চমৎকার গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার