ছোট্ট শিশুদের খেলার জগৎটা অনেক বিশাল আর তাদের কল্পনাশক্তির বিস্তারও অসীম। খেলার সময় শিশুরা যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে যায়, যেখানে খেলনাগুলো তাদের বন্ধু, আর চারপাশের সবকিছুই তাদের খেলার উপাদান।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ঘরের মেঝেতে খেলনাগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকলে মা-বাবা হিসেবে আমরা বিরক্ত হই। এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা ভিক্টোরিয়া গুতেরেসের একটি অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।
ভিক্টোরিয়ার সাত বছর বয়সী ছেলে নিকো খেলছিল। খেলনাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারিদিকে। প্রথমে তিনি সেগুলো গোছাতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন।
নিকোর জগৎটাকে তিনি তার ছেলের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন। খেলনার ছোট ছোট চরিত্রগুলো যেন বীরের বেশে এক বিশাল অভিযানে নেমেছে, আর বিল্ডিং ব্লকগুলো আকাশে ছুঁয়ে যাওয়া টাওয়ার।
ভিক্টোরিয়া জানালেন, সেই মুহূর্তে তিনি অনুভব করলেন, শিশুদের শৈশবকে উপভোগ করার এক অসাধারণ সুযোগ তার সামনে। তিনি বলেন, “আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উপলব্ধি করলাম, যা আমার কাছে এলোমেলো, নিকোর কাছে তা আসলে তার সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ।”
এরপর থেকে তিনি খেয়াল করেন, নিকো কীভাবে মনোযোগ দিয়ে খেলনাগুলো সাজায়, তাদের নিয়ে গল্প তৈরি করে। আগে যেখানে শুধু খেলনার জঞ্জাল দেখতেন, এখন সেখানে তিনি খুঁজে পান এক প্রাণবন্ত জগৎ, যা তার ছেলের মনের প্রতিচ্ছবি।
ভিক্টোরিয়া মনে করেন, শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়া তাদের বিকাশের জন্য জরুরি। যখন তারা নিজেদের তৈরি করা জগতে সম্পূর্ণভাবে ডুবে যেতে পারে, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, সৃজনশীলতারও উন্মেষ ঘটে।
তিনি মনে করেন, শিশুদের ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি এখন খেলার সময়টাতে নিকোকে বাধা দেন না। বরং তিনি জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কি এখনো খেলছ?” যদি নিকো খেলতে থাকে, তাহলে তিনি তাকে খেলতে দেন।
খেলা শেষে খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখার কথাটি তিনি বুঝিয়ে বলেন।
ভিক্টোরিয়ার মতে, এর ফলে নিকোর মধ্যে মালিকানার ধারণা তৈরি হয় এবং তার সৃজনশীলতা আরও বাড়ে। আগে খেলনাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তিনি বিরক্ত হতেন, কিন্তু এখন তিনি মনে করেন, এটা সাময়িক।
ভিক্টোরিয়া আরও লক্ষ্য করেছেন, নিকোর খেলার স্বাধীনতা দেওয়ার ফলে তার স্ক্রিন টাইম কমেছে এবং সে আরও স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। যখন আমি তার খেলাকে এলোমেলো নয়, বরং ইতিবাচক এবং সৃজনশীল হিসেবে দেখা শুরু করলাম, তখন সেও যেন আরও উৎসাহিত হলো। এখন সে খেলায় আরও মনোযোগী, কল্পনাপ্রবণ এবং শান্ত থাকে।”
আসলে, শিশুদের কল্পনাশক্তি ক্ষণস্থায়ী। তাদের এই সুন্দর সময়কে উপভোগ করতে দেওয়া উচিত। আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা উচিত, শিশুদের খেলার মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা।
তথ্য সূত্র: পিপল