হলিউডে আবার সাফল্যের ঢেউ: ২০২৩ সালের মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সিনেমার বাজার।
করোনা অতিমারীর ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হলিউডের সিনেমার বাজার। লেখকদের ধর্মঘট, প্রত্যাশা মতো ব্যবসা করতে না পারা সিনেমা এবং সিনেমা হল ও অনলাইন স্ট্রিমিং-এর মধ্যে মুক্তি নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা— সব মিলিয়ে বেশ কঠিন সময় পার করেছে চলচ্চিত্র শিল্প।
তবে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও, ২০২৪ সালের শুরুটা ভালো হয়নি। জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের শুরু পর্যন্ত বক্স অফিসের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল, যা ছিল তার আগের বছরের তুলনায় ৭.৬ শতাংশ কম।
তবে, আশার আলো দেখা যায় এপ্রিল মাস থেকে। দর্শকদের মধ্যে পুরোনো দিনের সিনেমার প্রতি আগ্রহ এবং ইতিবাচক আলোচনা— সব মিলিয়ে সিনেমা হলমুখী হয়েছেন দর্শক।
ওয়ার্নার ব্রোস. পিকচার্সের সিনেমা ‘এ মাইনক্রাফট মুভি’ প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,৭৮০ কোটি টাকা) আয় করে।
একইসাথে, রায়ান কুগলারের সিনেমা ‘সিনার্স’ প্রত্যাশা ছাড়িয়ে প্রায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা) আয় করেছে।
ওয়ার্নার ব্রোস. ডিসকভারি হলো সিএনএনের মূল সংস্থা।
‘মাইনক্রাফট’-এর সাফল্যের পর মে মাসে সিনেমার বাজারে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়।
বিশেষ করে মে মাসের মেমোরিয়াল ডে উইকেন্ডে বক্স অফিসের আয় ২০২৪ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ বেড়েছে।
এর প্রধান কারণ ছিল ডিজনির লাইভ-অ্যাকশন সিনেমা ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’-এর দারুণ সাফল্য।
সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনেই ১৮৩ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা) আয় করে।
বর্তমানে সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে ৩৮০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকা) এর বেশি আয় করেছে এবং চলতি বছরে ‘মাইনক্রাফট’-কে (৪২৩.৯ মিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও, মে মাসে ভালো ব্যবসা করেছে ডিজনি/মার্ভেলের ‘থান্ডারবোল্টস’ (১৮৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২,১০০ কোটি টাকা), প্যারামাউন্টের ‘মিশন: ইম্পসিবল – দ্য ফাইনাল রেকনিং’ (১৭৩ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১,৯০০ কোটি টাকা) এবং ওয়ার্নার ব্রোসের ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন: ব্লাডলাইনস’ (১৩৩ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা)।
এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
জুন মাসে ইউনিভার্সালের লাইভ-অ্যাকশন সিনেমা ‘হাউ টু ট্রেইন ইউর ড্রাগন’ মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম সপ্তাহেই প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা) আয় করেছে।
সবমিলিয়ে, ২০২৫ সালের সিনেমা বাজার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৪৪,০০০ কোটি টাকা) পৌঁছাতে চলেছে।
যা গত বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সিনেমার বাজারের এই ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ হলো ভালো মানের সিনেমা তৈরি হওয়া।
সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে বিনোদনের সস্তা মাধ্যম হিসেবে সিনেমা হল এখনো জনপ্রিয়।
সিনেমা হলগুলিতে টিকিট-এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় দর্শকদের কাছে এটি এখনো পছন্দের।
নিউ ইয়র্ক এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো বড় শহরগুলোতে টিকিটের দাম ২৫ ডলার পর্যন্ত হলেও, বিভিন্ন সিনেমা হল তাদের দর্শকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, সিনেমার বাজার এখনো একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা।
কারণ, এখানে সবকিছুই সিনেমার সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল।
একইসাথে, সিনেমার বিষয়বস্তু এবং দর্শকদের রুচির পরিবর্তনের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপ্টেন আমেরিকা এবং থান্ডারবোল্টসের মতো সুপারহিরো সিনেমাগুলোও সব সময় ভালো ব্যবসা করতে পারেনি।
যদিও এপ্রিল ও মে মাসের সাফল্যের কারণে সিনেমার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তবে ডেভিড এ.
গ্রস-এর হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬.৫ শতাংশ এবং অতিমারীর আগের গড় আয়ের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ কম ব্যবসা হয়েছে।
আশা করা যায়, আগামী দিনে ‘এফ১’, ‘এম৩৬এএন ২.০’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’, ‘সুপারম্যান’, ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপস’-এর মতো সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে, সিনেমার বাজার আরও শক্তিশালী হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন