বিশ্বের প্রতিটি দেশ পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করা প্রথম ব্যক্তি: এক অদম্য অভিযাত্রীর গল্প।
কল্পনা করুন, আপনি উড়োজাহাজের টিকিট কাটার কথা ভাবছেন, কিন্তু আপনার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার কোনো উপায় নেই। ডেনমার্কের নাগরিক থোর পেডারসেনের (Thor Pedersen) গল্পটি এমনই, যিনি উড়োজাহাজে চড়া ছাড়াই বিশ্ব ভ্রমণের এক অসম্ভব অভিযানে নেমেছিলেন।
তাঁর এই যাত্রা কোনো সাধারণ ভ্রমণ ছিল না, বরং ছিল এক অসাধারণ অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত। নয় বছর, নয় মাস এবং ষোলো দিনের এক দীর্ঘ এবং কষ্টকর পথ পাড়ি দিয়ে তিনি পৌঁছেছিলেন বিশ্বের ২০৩টি দেশে।
২০১৩ সালে, এই দুঃসাহসিক অভিযান শুরুর আগে থোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই উড়োজাহাজ ব্যবহার করবেন না। প্রতিটি দেশে অন্তত ২৪ ঘণ্টা কাটানো তাঁর জন্য ছিল বাধ্যতামূলক, কিন্তু তিনি যত দিন খুশি থাকতে পারতেন।
যাত্রা শুরুর পর, তিনি একটানা ভ্রমণ করেছেন, এবং গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত তাঁর বাড়ি ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না। এছাড়াও, তাঁর ভ্রমণের আরও কিছু নিয়ম ছিল: ঘুষ দেওয়া যাবে না এবং প্রতিদিনের খরচ ছিল গড়ে ২০ মার্কিন ডলারের মতো।
তাঁর এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তিনি ‘ওয়ান্স আপন আ সাগা’ (Once Upon a Saga) নামক ব্লগে লিপিবদ্ধ করেছেন। একইসঙ্গে, তিনি ডেনিশ রেড ক্রস-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ১৯২টি দেশের রেড ক্রস অফিসেও গিয়েছেন।
থোরের এই যাত্রাপথে ছিল নানা অভিজ্ঞতা। কখনো তিনি দুর্গম পাহাড়ি পথে হেঁটেছেন, আবার কখনো জাহাজে চড়ে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন।
বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস এবং মানুষের সঙ্গে মিশে তিনি জীবনের নতুন স্বাদ পেয়েছেন। ভ্রমণের সময় তিনি অনেক মানুষের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন, যা তাঁর এই দীর্ঘ পথচলায় সাহস জুগিয়েছে।
তাঁর ভাষায়, “একজন অপরিচিত ব্যক্তি হলো এমন একজন বন্ধু, যার সঙ্গে এখনো আপনার দেখা হয়নি।”
এই ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে থোর জানান, ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁর মন কেড়েছিল। এছাড়া, মাচুপিচুর পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে তিনি এক অন্যরকম অনুভূতি লাভ করেছিলেন।
তবে, তাঁর এই যাত্রা সবসময় মসৃণ ছিল না। একবার আইসল্যান্ড থেকে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করার সময় এক ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন তিনি। এমনকি, ভিসার জন্য বিভিন্ন দূতাবাসে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে।
বিশেষ করে, কোনো কোনো দেশে ভিসা পাওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন।
দীর্ঘ এই ভ্রমণে থোরকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভ্রমণের এক পর্যায়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
তবে, তাঁর স্ত্রী, যিনি নিজেও একজন ডাক্তার, সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন। এই ভ্রমণের সময়ই তানজানিয়াতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
তাঁদের বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকটি মজার ঘটনাও রয়েছে। প্রথমে, তাঁরা অনলাইনে বিয়ে করেন। এরপর, ভানুয়াতুতে সমুদ্রের তীরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সবশেষে, ডেনমার্কে ফিরে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ সম্পন্ন করেন।
বর্তমানে, থোর ‘প্রজেক্ট ৭৭৩’ (Project 773) নামের আরেকটি নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন, যেখানে তিনি বিশ্বের আরও ৭৭৩টি স্থানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন।
থোরের এই দুঃসাহসিক যাত্রা আমাদের সকলের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে যেকোনো অসম্ভবকে জয় করা যায়।
তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, আমাদের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার