টেসলার স্ব-চালিত ‘রোবোট্যাক্সি’ নিয়ে অবশেষে স্বপ্নপূরণের পথে এগোচ্ছেন ইলন মাস্ক। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের ঘোষণা দিলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
অবশেষে, টেক্সাসের অস্টিনে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সংখ্যক গাড়ি নিয়ে এই পরিষেবা চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে, সমালোচকদের মতে, মাস্কের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
২০১৯ সালে মাস্ক ঘোষণা করেছিলেন, পরের বছরই রাস্তায় চলবে চালকবিহীন ‘রোবোট্যাক্সি’। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এমনকি, পরের বছরও একই কথা বলেছিলেন তিনি।
গত বছরও একই আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। অবশেষে, অস্টিনে সীমিত পরিসরে এই প্রকল্পের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথমে ১০-১২টি গাড়ি দিয়ে শুরু হলেও, সফল হলে দ্রুত এর প্রসার ঘটানো হবে বলে মাস্কের প্রত্যাশা।
তবে, এই পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। মাস্ক যখন এই ঘোষণাগুলো দিচ্ছিলেন, সেই সময়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ওয়েইমো’ (Waymo) দ্রুততার সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেস, সান দিয়েগো এবং অস্টিনের মতো শহরগুলোতে চালকবিহীন ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করে দিয়েছে।
তারা এরই মধ্যে এক কোটি বারের বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে।
অন্যদিকে, মাস্কের রাজনৈতিক মন্তব্যের জেরে টেসলার বিক্রি কমেছে। বাজারে এসেছে অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ির নতুন মডেল, যা টেসলার বাজার হিস্যা কেড়ে নিচ্ছে। এছাড়া, মাস্কের কিছু বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে বিনিয়োগকারীরাও কিছুটা হতাশ।
যদিও টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা এখনো মাস্কের উপর আস্থা রেখেছেন, কারণ তিনি ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরি করে ভালো মুনাফা এনে দিয়েছেন। এক দশক আগে টেসলার শেয়ারের দাম ছিল প্রায় ১৮ ডলার, যা বর্তমানে বেড়ে ৩২২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মাস্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, অস্টিনে প্রাথমিকভাবে সীমিত সংখ্যক গাড়ির মাধ্যমে পরিষেবা শুরু হবে। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য শহরে এর বিস্তার ঘটবে। এমনকি, আগামী বছর কয়েক লক্ষ গাড়ি রাস্তায় নামানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, এত দ্রুত এই প্রকল্পের বিস্তার করা কঠিন। তাদের মতে, শুরুতে হয়তো অল্প কিছু গাড়ি নামানো হবে, যা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। এমনকি, ২০২৮ সালের আগে এই পরিষেবা সকলের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
মাস্কের অতীতের কিছু বিতর্কিত ঘটনাও এক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালে তিনি জানিয়েছিলেন, শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে কোম্পানিকে প্রাইভেট করতে তার ‘অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা’ রয়েছে।
কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তে জানা যায়, এক্ষেত্রে তার কোনো লিখিত চুক্তি ছিল না। সম্প্রতি, টেসলার ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং’ (Full Self-Driving) প্রযুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ি নিজে থেকে চললেও, চালককে সবসময় সতর্ক থাকতে হয় এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়।
মাস্কের দাবি, রোবোট্যাক্সিগুলো উন্নত ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং’ প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে চলবে এবং নিরাপদ হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, টেসলার মালিকরা তাদের গাড়িকে চালকবিহীন ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন, যা তাদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করবে।
গাড়ির মালিকরা সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে এই সুবিধা পাবেন এবং তাদের গাড়িকে বহরে যুক্ত করতে পারবেন।
মাস্কের মতে, টেসলা দ্রুত পরিষেবা শুরু করতে পারবে, কারণ তারা ক্যামেরার উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে, ওয়েইমোর মতো কোম্পানি লেজার ও রাডারের মতো অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা ব্যয়বহুল।
তবে, বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, টেসলার দ্রুত এই পরিষেবা চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতে, মাস্ক মাঝে মাঝে এমন কিছু করেন যা সত্যিই অভাবনীয়।
তিনি ইলেক্ট্রিক গাড়ির বাজার তৈরি করেছেন এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন।
ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রযুক্তি বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস