যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তেহরান এখন কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার জবাব দেওয়ার জন্য তাদের হাতে ‘বিভিন্ন বিকল্প’ রয়েছে।
ইরান সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো, আন্তর্জাতিক নৌ-চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া, এমন নানা ধরনের পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে। তবে এসব পদক্ষেপের প্রতিটিই ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ইরান সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে। এই অঞ্চলে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে সরাসরি হামলা হলে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় তাদের অনুগত মিলিশিয়াদের সক্রিয় করতে পারে। অতীতে এই গোষ্ঠীগুলো এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইরাকে অবস্থিত ঘাঁটিগুলো। ধারণা করা হয়, সেখানে এখনো প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও এর আগে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতে যোগ দেয়, তাহলে তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের কৌশল নিতে পারে, যেখানে তারা প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে। এমন একটি দীর্ঘ এবং ধ্বংসাত্মক সংঘাত এড়িয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একসময় আগ্রহী ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইরানের হাতে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যদি তেহরান এমনটা করে, তাহলে বিশ্বজুড়ে তেলের বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই প্রণালী পারস্য উপসাগরকে আন্তর্জাতিক সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্ববাজারে তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এই পথে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর ইরানের একজন উপদেষ্টা এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান সম্ভবত দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করতে পারে। এমনকি বর্তমান সরকারের পতন হলেও, নতুন সরকারও একই পথে হাঁটতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অভিযোগ করে আসছে যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এছাড়াও, ইরান সম্ভবত পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ইরান সম্ভবত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর বদলে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার ভোরে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের কয়েকটি ভবনে আঘাত হানে, এতে ৮৬ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে ইরান সম্ভবত শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
ট্রাম্প সম্ভবত আবারও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সামরিক সক্ষমতা কমে গেলেও, তারা প্রতিশোধ হিসেবে সন্ত্রাসবাদী হামলা অথবা সাইবার হামলার মতো কৌশল নিতে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত খুবই কম। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর কূটনৈতিক আলোচনার আর কোনো সুযোগ আছে কিনা, তা তিনি জানেন না।
মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির জীবন ও জীবিকার ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন