ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কার্যত তাঁর সেই উদ্বেগকে সমর্থন জুগিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কেমন, তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালানো হয়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এমন একজন নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন যিনি এই অঞ্চলের জন্য ‘সমৃদ্ধি ও শান্তির ভবিষ্যৎ’ তৈরি করতে পারেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে ইসরায়েলের জন্য একটি ‘অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন।
ইসরায়েল অবশ্য আগে থেকেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে নেতানিয়াহুর জন্য পরিস্থিতি আরও অনুকূলে এসেছে।
কারণ, এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রকে ইসরায়েলের মিশনে শামিল করতে পেরেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবিভ বুশিনস্কি মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ছিল নেতানিয়াহুর ‘সবচেয়ে বড় অর্জন’। তাঁর মতে, এই সাফল্যের কারণে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।
যদিও ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার ঘটনা এখনো তাঁর জন্য একটি ‘দাগ’ হিসেবে রয়ে গেছে, তবে ইরানের বিরুদ্ধে এই সামরিক পদক্ষেপ তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তবে, এখন নেতানিয়াহুর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ইরানের বিরুদ্ধে এই সামরিক পদক্ষেপের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটি নির্ধারণ করা এখন তাঁর জন্য জরুরি।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ইরানের সেনারা যদি মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা না করে, তাহলে তারা এই অভিযান বন্ধ করতে পারে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফিয়ে ডেফ্রিন জানিয়েছেন, তাঁরা ‘অভিযানটি দীর্ঘায়িত করার’ প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেন-ডর ইয়ামিনি মনে করেন, নেতানিয়াহুকে পছন্দ না করলেও, ইরানের বিরুদ্ধে তাঁর এই পদক্ষেপকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে।
তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান শাপিরো মনে করেন, এই মুহূর্তে পদক্ষেপ নেওয়া এবং অপেক্ষা করা – উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকি রয়েছে।
তবে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা তৈরি হতে দিলে ইসরায়েলের জন্য তা আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারত।
মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা দরকার। প্রথমত, ইরান একটি সম্ভাব্য জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ।
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিবেচনায় ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন।
তাই, সেখানকার রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অতএব, মধ্যপ্রাচ্যের এই ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন