শিরোনাম: ভবিষ্যতের যুদ্ধ? ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতর্কিত হামলা, তেহরানের জবাবের হুঙ্কার
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যেন থামছেই না। ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই, ২০২৩ সালের জুন মাসের ২২ তারিখে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর এক ভয়াবহ হামলা চালায়।
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তেহরান এই ক্ষতির পরিমাণকে অস্বীকার করে এর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক বোমারু বিমান বি-২ স্পিরিট (B-2 Spirit) থেকে গভীর মাটির নিচে অবস্থিত ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানা হয়। এই হামলায় ব্যবহৃত হয় জিবিইউ-৫৭ ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা, যা মাটির গভীরে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে সক্ষম।
একই সময়ে, একটি মার্কিন সাবমেরিন থেকে ছোড়া হয় টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। হামলায় ফোরদো, নাটাঞ্জ এবং ইসফাহানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো ছিল মার্কিন টার্গেটের অন্তর্ভুক্ত।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযান ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং এতে সাফল্যের হার ছিল প্রায় শতভাগ। হামলার আগে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, হামলার কয়েক দিন আগে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার কথা জানান। একই সময়ে, কয়েকটি বি-২ বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্রের অন্য একটি ঘাঁটির দিকে যাত্রা করে, যা জনসাধারণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়।
পেন্টাগন সূত্রে খবর, হামলায় প্রায় ৭৫টি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা এবং দুই ডজনের বেশি টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। এই অভিযানে ১২৫টির বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়।
তবে, হামলার সময় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো প্রতিরোধের সৃষ্টি করতে পারেনি।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেজসেথ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলো ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে দুর্বল করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলায় তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি এবং তারা এর সমুচিত জবাব দেবে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) এলাকাগুলোতে সম্ভাব্য তেজস্ক্রিয়তার চিহ্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস