একজন মায়ের ক্যান্সার যুদ্ধের গল্প: সাহস আর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী মিস্তি দে লা ক্রুজের জীবনটা হঠাৎ করেই বদলে যায় যখন তিনি জানতে পারেন তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেপ্টেম্বরের ২০২২-এ, তার শরীরে তৃতীয় স্তরের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
আট সন্তানের জননী মিস্তির জীবনে নেমে আসে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর মিস্তির জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। একদিকে যেমন তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন, তেমনই পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্বও তার কাঁধে।
এই কঠিন সময়ে তার পরিবারের, বিশেষ করে সন্তানদের মানসিক অবস্থা ছিল খুবই উদ্বেগজনক। মিস্তির ১০ বছর বয়সী ছেলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, কারণ মায়ের অসুস্থতা তাকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছিল।
মায়ের কিছু হলে কী হবে, এই দুশ্চিন্তায় সে রাতে ঘুমাতে পারত না।
ক্যান্সারের চিকিৎসার কারণে মিস্তির শরীরে দেখা দেয় নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি তিনি মানসিক দিক থেকেও ভেঙে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, “একজন মা হিসেবে সন্তানদের জন্য সবল থাকতে চাইলেও, ধীরে ধীরে যখন বুঝতে পারছিলাম আমি আগের মতো নেই, তখন খুব কষ্ট হতো।”
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করাটা শুধু শারীরিক কষ্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল এক কঠিন মানসিক যুদ্ধও। একদিকে অসুস্থতা, অন্যদিকে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা – সব মিলিয়ে এক গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল।
মিস্তি তার বড় সন্তানদের সঙ্গে ক্যান্সারের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। ছোট ছেলের সঙ্গেও তিনি ধীরে ধীরে কথা বলেন।
ক্যান্সার কী, এর চিকিৎসা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে তিনি সহজ ভাষায় তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “ছেলে যখন জানতে চাইল, আমি মরে যাবো কিনা, তখন খুব কষ্ট হয়েছিল।
আমি তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি যে, ডাক্তাররা তাদের সেরাটা দেবেন, যাতে এমনটা না হয়। তবে, কারো পক্ষেই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়, তাই আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
চিকিৎসার পাশাপাশি, পরিবারের জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করতেন মিস্তি। প্রতি রবিবার তারা সবাই মিলে একসাথে রাতের খাবার খেতেন।
অসুস্থতার কারণে রান্নার কাজটি আগের মতো করতে না পারলেও, পরিবারের সদস্যরা তাকে এতে সাহায্য করত।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মিস্তি অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি শিখেছেন, সন্তানদের সঙ্গে সব কথা খোলাখুলিভাবে বলতে হয়।
তাদের ভয়, দুঃখ এবং দ্বিধাগুলো বুঝতে হবে। তিনি বলেন, “প্রত্যেকের শোক প্রকাশের ধরন আলাদা, এবং এটিও শোকের একটি প্রক্রিয়া।
ক্যান্সার হওয়ার আগের মানুষটা আর আমি নেই।”
ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ অনেক সময় বিশাল হয়ে দাঁড়ায়। এই আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে তিনি একটি অনলাইন ফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিয়েছিলেন, যাতে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খরচগুলো চালানো যায়।
মিস্তির মতে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো- পরিবারের সমর্থন, সাহস এবং কোনো ধরনের সাহায্য চাইতে দ্বিধা না করা।
তিনি আরও বলেন, “ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার অর্থ হলো জীবনের প্রতিটি দিক থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা। আর এই সুস্থ হতে সময়ের প্রয়োজন।”
তথ্য সূত্র: পিপল