বেলারুশের বিরোধী নেতা সিয়ার্হেয়ি তিকহানভস্কি পাঁচ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পাওয়ার পর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। কারাগারে কাটানো সময়ে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
এক সময়ের সুঠাম দেহের অধিকারী এই ব্যক্তি মুক্তির পর জানিয়েছেন, কিভাবে কারাগারে তাকে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে।
২০২০ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের আগে তিকহানভস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার ১৯ বছরের বেশি কারাদণ্ড হয়।
বিরোধী হিসেবে পরিচিত এই নেতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মুক্তির পর তিনি জানিয়েছেন, কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তার ওজন ১৩৫ কেজি থেকে কমে ৭৯ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছিল।
কারাগারে তাকে এক প্রকার বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার এবং চিকিৎসা সেবা থেকে তিনি ছিলেন বঞ্চিত।
বেলারুশের এই বিরোধী নেতাকে মুক্তি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
অনেকের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা হিসেবেই তিকহানভস্কিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তিকহানভস্কি তার মুক্তির জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের কারণেই সম্ভবত তাকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেলারুশের কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিছুটা হলেও সম্পর্ক ভালো করতে চাইছে।
কারাগারে থাকাকালীন সময়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন ৪৬ বছর বয়সী তিকহানভস্কি। তিনি জানান, কারাগারে তার কথা বলতেও কষ্ট হতো।
এমনকি সেখানকার পরিবেশ এতটাই খারাপ ছিল যে, তিনি বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। কারাগারের কষ্টের দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
তিকহানভস্কি তার মুক্তির জন্য ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, পুতিন লুকাশেঙ্কোর শাসনকে টিকিয়ে রেখেছেন।
রাশিয়ার কাছ থেকে বেলারুশ ঋণ এবং ভর্তুকি হিসেবে তেল ও গ্যাস পায়। বিনিময়ে বেলারুশ, ইউক্রেনে সেনা ও অস্ত্র পাঠানোর জন্য মস্কোকে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিকহানভস্কিকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে হয়তো লুকাশেঙ্কো বিরোধী শিবিরের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছেন।
তবে তিকহানভস্কি জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।
তিনি মনে করেন, লুকাশেঙ্কো সহজে ক্ষমতা ছাড়বেন না, তবে গণতান্ত্রিক শক্তির জয় হবেই।
বর্তমানে বেলারুশে এখনো ১,১৭৭ জন রাজনৈতিক বন্দী রয়েছেন। তাদের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অ্যালেস বাইয়ালাতস্কি অন্যতম।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস