ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা এবং এর সম্ভাব্য ফল নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে দুর্বল করা। ট্রাম্প দাবি করেছেন, হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু হামলার প্রকৃত প্রভাব এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার ওপর এর স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, এই হামলার ফলে তেহরান আরও দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করতে পারে, যা ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে দেবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ‘ regime change’ বা সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত অনেককে বিস্মিত করেছে। যদিও কোনো কোনো মার্কিন কর্মকর্তা বলছেন, তাঁদের লক্ষ্য ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করা নয়। তবে ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের জেরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামলার ফলে ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেদিকে এখন সবার নজর। ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো হতে পারে। এছাড়া, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করারও সম্ভবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করছে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়। ইরানের সামরিক শক্তি এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে, যা দেশটির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে, দেশের অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানালেও, অনেকেই একে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত দেশের সংবিধানের পরিপন্থী এবং এর ফলে নতুন একটি সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপযুক্ত সময়ে এর জবাব দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে একটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এখন দেখার বিষয়, ইরান কীভাবে এর মোকাবিলা করে এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এই পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা নেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন