আসন্ন হিজরি নববর্ষ, মুসলিম বিশ্বে নতুন বছর শুরুর বার্তা নিয়ে আসে। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এই বছরটি ১৪৪৬ হিজরি সন।
হিজরি নববর্ষের সূচনা হয় পবিত্র মহররম মাসের প্রথম দিন থেকে। এই মাসটি মুসলিমদের জন্য আত্ম-অনুসন্ধান এবং নতুন করে ধর্মীয় প্রতিজ্ঞা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
পবিত্র হজের সমাপ্তির পরেই এই মাসের আগমন ঘটে, যা মুসলিমদের জন্য এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।
হিজরি ক্যালেন্ডার একটি চান্দ্র বর্ষপঞ্জী, যা চন্দ্রের আবর্তন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই ক্যালেন্ডারের মাস ও তারিখগুলো, যেমন – রমজান মাস এবং ঈদ-উল-ফিতরের তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়।
হিজরি নববর্ষের সঠিক তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে, যা সাধারণত আকাশে নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
ইসলামিক ইতিহাস অনুযায়ী, হিজরি ক্যালেন্ডারের সূচনা হয়েছে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে। এই বছরটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যখন ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
এই ঘটনাটি ‘হিজরতের বছর’ হিসেবে পরিচিত, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
মহররম মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ।
এই কারণে, এই মাসটি ইবাদত, দান-খয়রাত এবং আত্ম-সমালোচনার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক মুসলিম দেশে, যেমন – সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো ও সিরিয়াসহ আরও অনেক দেশে হিজরি নববর্ষকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও হিজরি নববর্ষ সাধারণত উৎসবের চেয়ে গভীর ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়, তবে মুসলিমরা তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী এই দিনটি উদযাপন করে।
শিয়া মুসলিমদের জন্য, মহররম মাসের প্রথম দশ দিন শোকের মাস। এই সময়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের শাহাদাতের ঘটনা স্মরণ করা হয়।
আশুরার দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা শোক প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করেন। অনেকে কালো পোশাক পরে রাস্তায় বের হন এবং বুক চাপড়ান বা নিজেদের আঘাত করেন।
অন্যদিকে, সুন্নি মুসলিমরা এই দিনে নফল রোজা রাখেন, যা হযরত মুসা (আ.)-এর মিশর থেকে মুক্তি পাওয়ার স্মরণে পালন করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে ইরান ও গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি হিজরি নববর্ষের উদযাপনকে প্রভাবিত করছে। তেহরানে, যেখানে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে শোক পালনের জন্য অনেক মানুষের সমাগম হয়।
কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি ভিন্ন। শহরের রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও খোলা নেই। অনেকেই শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনিদের স্মরণেও বিভিন্ন স্থানে শোক পালন করা হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হিজরি নববর্ষ মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। এটি মুসলিমদের আত্ম-উন্নয়ন, ত্যাগ ও একতার শিক্ষা দেয়।
এই দিনে, আমরা সবাই নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার এবং নতুন করে জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা পাই।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস