গাড়ি দুর্ঘটনার নিরাপত্তা পরীক্ষায় ব্যবহৃত ‘ক্র্যাশ টেস্ট ডামি’ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ব্যবহৃত এই ডামিগুলি মূলত পুরুষদের শরীরের গড়ন অনুযায়ী তৈরি করা হয়, যেখানে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত প্রযুক্তির নারী উপযোগী ডামি ব্যবহার করে পরীক্ষার মাধ্যমে গাড়ির নিরাপত্তা আরও নির্ভরযোগ্য করা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NHTSA) -এর পরীক্ষায় ব্যবহৃত ‘হাইব্রিড থ্রি’ নামক ক্র্যাশ টেস্ট ডামি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে, একজন গড়পড়তা পুরুষের শারীরিক গঠন অনুযায়ী।
বর্তমানে নারীদের গড় স্বাস্থ্য এবং শরীরের গড়নে অনেক পরিবর্তন আসলেও, সেই অনুযায়ী ডামির গঠনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, গাড়ি দুর্ঘটনায় পুরুষদের তুলনায় নারীরা প্রায় ৭৩ শতাংশ বেশি আহত হন।
এই বিষয়টি নজরে আসার পর, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা নতুন করে নারী উপযোগী ডামি ব্যবহার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। সিনেটর ডেব ফিশার এই সংক্রান্ত একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যা ‘শি ড্রাইভস অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত।
এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হলো, NHTSA-কে তাদের পরীক্ষায় আরও উন্নত এবং নারীদের শরীরের গঠন অনুযায়ী তৈরি ডামি অন্তর্ভুক্ত করতে উৎসাহিত করা।
তবে, এই পরিবর্তনের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির নারী উপযোগী ডামি তৈরি করতে বেশি খরচ হয়।
উদাহরণস্বরূপ, Humanetics Group নামক একটি কোম্পানির তৈরি করা ‘থোর ৫এফ’ (THOR 5F) ডামির দাম প্রায় ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার, যা বর্তমান ব্যবহৃত ডামির দ্বিগুণ।
এছাড়া, কিছু গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার আশঙ্কা, নতুন ডামি ব্যবহারের ফলে আঘাতের ঝুঁকি বেশি দেখানো হতে পারে, যা সিটবেল্ট ও এয়ারব্যাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ফিচারের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতাও এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
যেমন, মারিয়া ওয়েস্টন কুহন নামের একজন নারী, যিনি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। তাঁর মতে, নারী উপযোগী সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে হয়তো দুর্ঘটনার ফল অন্যরকম হতে পারত।
এই পরিস্থিতিতে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের নিরাপত্তা পরীক্ষায় নারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ডামি ব্যবহার শুরু করেছে।
ইউরোপে Humanetics-এর তৈরি ‘থোর ৫০এম’ (THOR 50M) এবং ‘থোর ৫এফ’ (THOR 5F) ডামি ব্যবহার করা হচ্ছে।
চীন ও জাপানের মতো দেশও এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠনের ভিন্নতার কারণে, গাড়ির নিরাপত্তা পরীক্ষায় উভয়ের জন্য আলাদা ডামি ব্যবহার করা জরুরি।
এর ফলে, দুর্ঘটনার সময় নারী যাত্রীদের আঘাতের ঝুঁকি কতটা, সে সম্পর্কে আরও সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে এবং সেই অনুযায়ী গাড়ির ডিজাইন ও সুরক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
যদিও NHTSA নারী উপযোগী ডামি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, তবে এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, NHTSA-এর ক্র্যাশ টেস্ট ডামির উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ এখনো অনেক বাকি।
গাড়ি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই, নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ডামি ব্যবহার করে পরীক্ষার মাধ্যমে গাড়ির নিরাপত্তা আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলার বিষয়টি এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস