গ্রিসের এথেন্সে অবস্থিত, প্রায় আঠারোশো বছরের পুরনো ঐতিহাসিক হেরোড অ্যাটিকাস নাট্যশালা, সংস্কারের উদ্দেশ্যে অন্তত তিন বছরের জন্য বন্ধ হতে চলেছে। এই খবরটি শুধু গ্রিসের সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শিল্প ও স্থাপত্য অনুরাগী সকলের কাছেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এথেন্সের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই প্রাচীন নাট্যশালা, এক্রোপলিসের পাদদেশে আজও তার ঐতিহাসিক মহিমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি শুধু একটি সাধারণ প্রেক্ষাগৃহ নয়, বরং এক জীবন্ত কিংবদন্তী।
প্রতি বছর এখানে অনুষ্ঠিত হয় এথেন্স এপিদোরাস উৎসব, যা গ্রিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বহু শিল্পী এই মঞ্চে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
লুসিয়ানো পাভারোত্তি, ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, কোল্ডপ্লে-র মতো বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীরা এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। মারিয়া ক্যাল্লাসের মতো গ্রিক শিল্পীর কাছেও এই মঞ্চ ছিল বিশেষ সম্মানের।
হেরোড অ্যাটিকাস নাট্যশালার বন্ধ হয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় ক্ষতি। কারণ, এটি শুধু একটি বিনোদন কেন্দ্র ছিল না, বরং ছিল শিল্পকলার এক অসাধারণ নিদর্শন।
খোলা আকাশের নিচে, তারার আলোয় এই নাট্যশালায় বসে দর্শকবৃন্দ যে মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা লাভ করতেন, তা সত্যিই অতুলনীয়।
এই প্রেক্ষাগৃহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেওয়া এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে জরুরি। তবে এর ফলে এথেন্স এপিদোরাস উৎসবের ওপর প্রভাব পড়বে।
উৎসবের পরিচালক ক্যাটেরিনা ইভাঞ্জেল্যাতোস জানিয়েছেন, “হেরোডিওন উৎসবের সমার্থক হয়ে উঠেছে, এটি উৎসবের হৃদপিণ্ডস্বরূপ।” উৎসবের পরবর্তী আয়োজনগুলির জন্য বিকল্প স্থান খুঁজতে হবে।
ঐতিহাসিক এই নাট্যশালার সংস্কারের কাজ কিভাবে হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রী লিনা মেনডোনির মতে, মেরামতির কাজটি কমপক্ষে তিন বছর সময় নেবে।
সংস্কারের সময় এর ঐতিহাসিক স্থাপত্যের কোনো পরিবর্তন হবে কিনা, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখনো গবেষণা চলছে।
হেরোড অ্যাটিকাসের এই দীর্ঘ বিরতি দর্শকদের জন্য যেমন ক্ষতির, তেমনই শিল্পীদের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যারা এখানে পারফর্ম করেছেন, তাদের কাছে এই মঞ্চে অভিনয় করাটা ছিল যেন “একটি মন্দিরে প্রবেশ করার মতো”।
শিল্পী লিস লিন্ডস্ট্রম যেমনটা বলেছিলেন, “এখানে এসে পারফর্ম করাটা আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের।”
ঐতিহাসিক এই নাট্যশালার সংস্কার সম্পন্ন হলে, এটি আবারও তার পুরনো রূপে ফিরবে এবং শিল্পকলার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হবে, এমনটাই সকলে প্রত্যাশা করেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস